রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বালুয়াভাটা মহল্লায় চলাচলের রাস্তায় দেয়াল দিয়ে এক পরিবারকে ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বদরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা জোর করে রাস্তায় দেয়াল তুলে তাদের অবরুদ্ধ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী প্রদীপ কুমার সাহা জানান, তারা ৪০ বছর ধরে পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি ৪০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি প্রদীপের বড় ভাই রাজ কুমার সাহা নিজের ৬৫ শতক জমির ৫৭ শতক পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান উত্তম কুমার সাহার কাছে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট ৮ শতক জায়গা পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে রেখে দেন। ওই ৮ শতক জায়গা রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের কথা দলিলে উল্লেখ রয়েছে। গত ৩ মে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই রাস্তায় ইটের দেয়াল তুলে দেন উত্তম কুমার। সেই সঙ্গে বাসায় প্রবেশের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে পুরো পারিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গত ২০ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে বালুয়াভাটা মহল্লায় গিয়ে দেখা গেছে, ইটের গাঁথুনি দিয়ে প্রদীপ কুমারের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বাইরে থেকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রদীপ কুমার বলেন, ‘বড় ভাই রাজ কুমার সাহার জমি কিনে নেওয়ার পর আমার জমি কেনার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন উত্তম কুমার। জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এজন্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। সম্প্রতি পুরাতন বাজার এলাকায় আমার জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করলে সে ঘটনায় আদালতে মামলা করেছি। তখন ওই জমিতে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেন উত্তম কুমার। ফলে আমরা ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ আছি।’
প্রদীপ কুমারের ছেলে সুজন কুমার ও মেয়ে সুমিতা সাহা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা উত্তম কুমার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি আমরা।
এলাকাবাসী মমতাজ উদ্দিন ও আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি প্রদীপ কুমার ও তার পরিবার এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাদের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন উত্তম কুমার। এতে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে উত্তম কুমার সাহা বলেন, ‘৪০ বছর কেন ১০০ বছর যাতায়াত করলেও ওই রাস্তা দিয়ে এখন থেকে তাদের চলাচল করতে দেবো না। কারও ক্ষমতা থাকলে রাস্তা খুলে দেখাক। আমার জায়গা দিয়ে তাদের চলাচল করতে দেবো না। এজন্য দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তাসহ তাদের সব জমি আমি কিনেছি। এসব জমির দলিল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়মতো দেখাবো। কিন্তু প্রদীপ কুমারের ভাই রাজ কুমার রাস্তার ৮ ফুট জায়গা রেখে বাকিটা বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেছেন, এ নিয়ে আপনার মতামত কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না।’
এ ব্যাপারে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভা চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’