সরকার পতনের পর থেকে চাঁদপুরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। পরে প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে তালা দিয়েছে এলাকার কিছু শিক্ষার্থী।
গত রোববার শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে একটি সমোঝতা হলে তারা পুনরায় কলেজের তালা খুলে দিলে সোমবার থেকে কলেজের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এখনো তালা ঝুলছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরাক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর পদত্যাগের দাবি করে প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু শিক্ষার্থী গত ৩ সেপ্টেম্বর কলেজে ও অধ্যক্ষর কক্ষে তালা দেয়। এ সময় তারা কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে কলেজটির প্রধান ফটকে ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও কলেজ শিক্ষকদের মাঝে এ নিয়ে একটি আলোচনা হলেও এখনো অধ্যক্ষের বিষয়ে কোনো সমাধান হায়নি। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কলেজ থেকে তালা খুলে দেয়।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই কলেজের বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের বেশির ভাগ দাবি ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। তবে তারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ চন্দ্র দাসের পদত্যাগ করে শিক্ষার্থীদের পছন্দমতো অধ্যক্ষ দেওয়ার দাবি এখনো করে আসছে। কিন্তু সে দাবি নিয়মে না আসায় পূরণ করা যাচ্ছে না বলে জানান শিক্ষকরা।
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজে না থাকায় সেটিও করতে পারছেন না তারা। তারা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ছিল না, এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগ করলে নিয়ম মোতাবেক আমাদের কলেজের জ্যেষ্ঠ পাঁচজন শিক্ষকের যেকোনও একজনকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
কলেজের বর্তমান সভাপতিত্বের দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজে ভাঙচুর বিষয়টি আমি জানি না। তবে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কলেজে নতুন অধ্যক্ষ বসানো নিয়ে নানা মত রয়েছে বলে আমরা অবহিত হয়েছি। বিষয়টি জানার পর জেলা প্রাণী ও পশু সম্পদ কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। পরে তাদের প্রতিবেদন ও সরকারি নতুন বিধিমালা অনুযায়ী অধ্যক্ষের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
তবে সোমবার ওই কলেজে গিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউই তদন্তে আসেননি।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে কলেজ থেকে কোনও অভিযোগ পাইনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক রয়েছেন ৪১ জন।
এদিকে কলেজের পাশেই ফরাক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৬ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলে আছে। সরকার পতনের পর থেকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিদ্যালয়ে আসছেন না। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। বিদ্যালয়টিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় না আসায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া কিছু সাবেক ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষার রেজাল্ট শিট প্রধান শিক্ষকের কাছে থাকায় বিপাকে রয়েছে অটো পাসের এইচএসসির অনেক পরীক্ষার্থী। এগুলো নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কয়েকবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েও তা সংগ্রহ করতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার পতনের আগে স্কুল কমিটি নিয়ে একটি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ইলিয়াস মিয়া। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় নিয়োগ পাওয়ায় তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল অস্বচ্ছ। তাই তিনি এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্তির আবেদন করেও রয়ে গেছেন বাইরে। তিনি বিদ্যালয় উপস্থিত না থাকায় বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ওই স্কুলের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৯০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। প্রধান শিক্ষক না আসায় আমাদের কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
এ বিষয়ে ফরাক্কাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০ আগস্ট থেকে ছুটিতে আছি। বর্তমানে আমি চিকিৎসাধীন। তবে প্রথম আমি ১৪ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। শারীরিক সুস্থতা বোধ না হওয়ায় পুনরায় ১৪ দিনের ছুটিতে আছি। আমার ছুটির দরখাস্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি। বিদ্যালয়ে আমার কক্ষে কিছু ছাত্র-ছাত্রীর রেজাল্ট শিট আছে। আজ আমার সহকারি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আমি তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।