ইলিশের আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে এবং সরকারি সম্পদ রক্ষায় চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ড্রেজার ও বালুবাহী বাল্কহেড জব্দ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চাঁদপুরের চারটি নদী অঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ এবং সেই সঙ্গে বালু পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে নির্ধারিত এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৫ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
এদিকে জেলা প্রশাসকের এক সতর্ককরণ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের বাইরে নির্ধারিত এলাকায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হলো। বালু উত্তোলনের পর পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী হতে বালু তুলে বিক্রি করা হলে, তা ‘চোরাই বালু’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে বালু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজে ব্যবহৃত জলযানগুলো জব্দ করা হবে। যেসব জায়গায় বেআইনিভাবে চোরাই বালু জড়ো করে রাখা হয়েছে, তা বিধি অনুযায়ী সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে নেওয়া হবে। এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সব নদীর মালিক সরকার। যে জেলার ওপর দিয়ে যে নদীর যতটুকু বয়ে গেছে, তা সরকারের পক্ষে নদী রক্ষার দায়-দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। কারণ, নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সেক্ষেত্রে যেহেতু এখানকার কোনও নদীতে কোনও বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি, তাই কারও পক্ষের অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু তোলা যাবে না। বালু তুলে বিক্রি করলে সেটা ‘চোরাই বালু’ হবে। আর যেখানেই চোরাই বালু পাওয়া যাবে সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।
এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙনকবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত অবৈধ নৌযান জব্দ ও চোরাই বালু বিপণন কার্যক্রমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়।