Image default
বাংলাদেশ

চাঁদপুরে বালু উত্তোলনকারীরা কারাগারে যাবে: নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা কারাগারে যাবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। সেই সঙ্গে চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিতাড়িত করতে পারার বিষয়টিকে নদী রক্ষা ও পরিবেশের ইতিহাসে একটা বিরাট বিজয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং নদীর ইকোলজি, জীববৈচিত্র্য, ইলিশের উৎপাদন বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান।

এছাড়া সভায় অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘চাঁদপুরের নদীর যে চিত্র আগে দেখানো হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছে মেঘনায় একটা নৌ-যুদ্ধ হচ্ছে। এত ড্রেজার, এত বাল্কহেড মেঘনার বুক চিরে চিরে খাচ্ছে। তাই আমি দেখতে এসেছি এখন কি অবস্থা। নদী ঘুরে দেখে সত্যি আনন্দিত। এখানের প্রশাসন সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের বিতাড়িত করেছে। যারা বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে তারা ঈদের পর আবারও নদীতে ফিরে আসবে। বালু সন্ত্রাসীদের বলছি, খুব সম্ভবত তারা জেলে যাবে। তাদের স্থান হতে পারে কেরাণীগঞ্জ অথবা কাশিমপুর কারাগার। মেঘনার বুক চিরে নেওয়ার সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। তারা যদি আবারও আসে আমরাও আসবো। তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চুরি অন্য জায়গা পারলে করুক। পদ্মা-মেঘনার বুকে পারবে না। কারণ, এখানে জাতীয় সম্পদ ইলিশের অভয়াশ্রম। এখানে যদি এভাবে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়, তাহলে তো মৎস্যসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের বারবার বুঝিয়ে বলা হচ্ছে, আর কত? মাছের খাবারের মধ্যে ৩৭ শতাংশ যদি বালু থাকে। বালু খেয়ে মাছ বড় হতে পারে না। সেজন্য এখন অনেক ইলিশের সাইজ ছোট হয়ে গেছে। জাটকা সাইজের ইলিশের ভেতরে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। বালু উত্তোলনের প্রভাবগুলো দেখা যাচ্ছে। তবে নদী থেকে বালু সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন।’

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার পর অভিযানের খবর পেয়ে যখন ২২ মার্চ তিনশ-সাড়ে তিনশ ড্রেজার-বাল্কহেড পালিয়ে যাচ্ছিল, সেটি ছিল একটি বিরাট সংবাদ। নদী রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় দেশের ইতিহাসে এটি বিরাট বিজয়। সে বিজয় জনগণের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। দেশের মানুষ কিন্তু তা জানে না। তার কারণ হচ্ছে, এখানে মাত্র কয়েকজন সংবাদকর্মী আছেন যারা সাহসী এবং সৎ। তারাই কেবল সংবাদটি প্রকাশ করেছেন।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা বালু সন্ত্রাসীদের এ ধরনের অপকর্ম করতে সহায়তা করছে? বালু উত্তোলনের জন্য একজন জনপ্রতিনিধি ১৫টি ডিও লেটার দিয়েছেন। কার স্বার্থে?

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই কয়েক বছরে বালু উত্তোলনের কারণে কি পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি, নদীর ইকোলজিক্যাল ক্ষতি, পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছে, মাছের উৎপাদন কম হয়েছে, সামাজিক ক্ষতি- এসব ক্ষতির একটা হিসাব দেবে বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও পরীবীক্ষণ ) মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. খ.ম কবিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রাণী বিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি ও মাউশির সাবেক মহা-পরিচালক প্রফেসর খান হাবিবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।

এর আগে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান চাঁদপুরের নদী অঞ্চল ঘুরে দেখেন।

Source link

Related posts

হাসপাতালে রোগীকে যৌন হয়রানি, কারাগারে পরিচ্ছন্নতাকর্মী

News Desk

একাদশে ভর্তির আবেদন শুরু ৮ ডিসেম্বর

News Desk

ইসির বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল

News Desk

Leave a Comment