দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ চলাচল করছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে। আর এর প্রভাব পড়েছে এসব এলাকার মানুষের রাজধানীতে যাওয়ার আরেক রুট দৌলতদিয়া ঘাটে। রাজবাড়ী জেলার অন্যতম ব্যস্ত এই ঘাট গেল কয়েকদিন থেকে অনেকটাই ফাঁকা। ফেরিঘাটে তুলনামূলক সময় কম লাগায় খুশি ঘাট হয়ে পারাপারকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
বাগেরহাট টার্মিনাল থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৭টার দিকে রওনা হয়ে বেলা ১১টার দিকে দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাটের পন্টুনে পৌঁছায় দিগন্ত পরিবহনের একটি বাস। চার ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে উঠতে পেরে খুশি বাসের যাত্রী ও চালকরা। বাসের চালক টুকু বলেন, চার ঘণ্টায় সড়কে কোনও ঝামেলা ছাড়াই ঘাটে এসে পৌঁছাতে পেরেছি। ফেরি পারসহ গাবতলী পৌঁছাতে আর দুই ঘণ্টার মতো লাগবে। মোটামুটি ৬ ঘণ্টার মধ্যে আমরা গাবতলী পৌঁছাতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যেখানে শুধু ঘাটে এসেই ফেরির নাগাল পেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো লাগতো। সেখানে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে বাগেরহাট থেকে আমরা গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে পারছি। পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত না করলেও সেতুর কারণে আমাদের ভোগান্তির দিন শেষ হলো। এই দিনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম।
বাসটির সুপারভাইজার মো. শিমুল বলেন, এত দ্রত চলে আসবো, আর এসেই ফেরিতে উঠবো; আগেতো এটা কল্পনাতীত ছিল।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে সকাল ৭টার দিকে রওনা হয়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছান লালন পরিবহনের একটি বাস। দুই ঘণ্টার মধ্যে কোনও প্রকার যানজট ছাড়াই ফেরিতে উঠতে পেরেছে যাত্রীবাহী বাসটি।
বাসটির চালক মাসুম জানান, আগে যেখানে ফেরির সিরিয়াল পেতেই ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাতে পারছি। এটা বেশ স্বস্তিদায়ক।
তবে যাত্রী কিছুটা কম হওয়ায় উপার্জন কমার শঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। যদিও এখন সময় কম লাগায় আর্থিক অনেকটাই পুষিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দিগন্ত পরিবহনের সুপারভাইজার মো. শিমুল বলেন, ’পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ রুটে যাত্রী কিছুটা কমেছে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। এমন কম যাত্রী নিয়ে চলতে থাকলে মালিকপক্ষসহ আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তবে সময় কম লাগছে, সেদিন থেকে যাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক।’
বিআইডব্লিউটিসি-র দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ঘাটে যানবাহনের চাপ কমে গেছে। যে সব যানবাহন ঢাকার দিকে যাচ্ছে, তারা সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারছে।
এখন ঘাটে আসা যানবাহন ও মানুষের ভোগান্তি নেই বললেই চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পারছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২১ টি ফেরির মধ্যে ১৮টি ছোট-বড় ফেরি চলাচল করছে। তিনটি ডাম্প (টানা) ফেরি যানবাহন কম থাকার কারণে বসিয়ে রাখা হয়েছে।’