যশোরের রাজারহাটে কোরবানির পশুর প্রচুর চামড়া উঠলেও দাম কম হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, হাটে চামড়া এনে তারা লাভ করবেন কী, বড় অংকের টাকা লোকসান হয়েছে। যদিও আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দাম এবং ক্ষেত্রবিশেষেও একটু বেশি দামেও চামড়া কিনছেন তারা।
গত শনিবার কোরবানি ঈদের পর দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট রাজারহাটে ২০ হাজার চামড়া ওঠে। প্রতিবারের মতো এবারও খুলনা বিভাগসহ আশপাশের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে আসেন। হাটের জায়গা উপচে রাস্তার পাশেও চামড়া নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা।
তবে চামড়ার দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অভয়নগর থেকে হাটে আসা ক্ষুুদ্র ব্যবসায়ী অশোক দাস বলেন, ‘হাটে ১২০ পিস চামড়া এনেছি। এর মধ্যে ৩০ পিস ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বেশিরভাগ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। হাটে ভালো চামড়া ২৮ টাকা এবং ছোট চামড়া ২২ টাকা বর্গফুট দরে বিক্রি করায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।’
একই উপজেলার ভূগিলহাট গ্রাম থেকে আসা পবিত্র দাস ২৭১ পিস চামড়া আনেন। এর মধ্যে বড় চামড়া ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং ছোট চামড়া ১০ টাকা বর্গফুট দরে বিক্রি করেছেন। সরকার নির্ধারিত ৪৪ টাকার স্থলে গড়ে ৩০ টাকা ফুট দরে বিক্রি করায় তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতিবার এভাবে ক্ষতি হতে থাকায় তিনি চামড়া ব্যবসা করবেন না বলে জানিয়েছেন।
দিঘলিয়া থেকে আসা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘হাটে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা দরে চামড়া বিক্রি করেছি। এতে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে আমার।’
বাগেরহাটের মোংলা থেকে ১৫০ পিস চামড়া আনেন নিতাই দাস। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় চামড়া বিক্রি করেননি। তিনি বলেন, ‘চামড়া প্রতি গড়ে খরচ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বলেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।’
গোপালগঞ্জ থেকে সুকুমার বিশ্বাস ২০০ পিস চামড়া নিয়ে আসেন। বড় চামড়ায় তার খরচ হয়েছে হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রি করেছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। অর্থাৎ, প্রতি বর্গ ফুট বিক্রি সর্বোচ্চ ২৮ টাকা।
তিনি বলেন, ‘ট্যানারি মালিক প্রতিনিধি ও আড়তদাররা চামড়ার দামের বিষয়ে যে কথা বলছেন, তা সত্য নয়। তারা বেশি দামে চামড়া কিনছেন বলে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছেন।
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে হাটে আসা খোকন ট্যানারির প্রতিনিধি আবু বকর সিদ্দিকী শাহীন বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছি। কিছু চামড়া নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে কিনেছি। হাটে ক্রেতা বেশি হওয়ায় বাজার ভালো। দুই হাজার পিস চামড়া কেনার লক্ষ্য নিয়ে হাটে এসেছি। ইতোমধ্যে ৬০০ বেশি চামড়া কিনেছি। সর্বোচ্চ ১৭০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছি আমরা। দামের বিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না।’
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘হাটে আশানুরূপ চামড়া উঠেছে। ঈদ পরবর্তী এই হাটে বেচাকেনা ভালো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করছেন বলে জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এজন্য সারা দেশে চামড়ার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু যখনই রফতানি বন্ধ করা হয়েছে, আবারও ধস নেমেছে। এ জন্য আবারও ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি দুই পার্সেন্ট সুদে চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।’
প্রসঙ্গত, রাজারহাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করেন। এই হাটে ১০ কোটি টাকার অধিক চামড়া কেনাবেচা হয়।