চার দিন অতিবাহিত হলেও তিনটি পৃথক উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে টেনে তোলা সম্ভব হয়নি পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১০টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরিরা। রজনীগন্ধার উদ্ধারে অর্ধশতাধিক ডুবুরি উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’-এর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ফেরি সেক্টরের ওই কর্মকর্তা জানান, ফেরিটি উদ্ধারে তিনটি পৃথক উদ্ধারকারী জাহাজ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চার দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের। বিআইডব্লিটিসি’র আরিচা এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, হুমায়ুন কবিরের সন্ধানে পদ্মা নদীর ভাটিতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এখনও কোনও হদিস মেলেনি। জীবিত তো দূরের কথা এখন লাশ শনাক্ত করাই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের কমান্ডার ওবায়দুল করীম বলেন, ‘এখনও ফেরি দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নাগাদ এটাকে ভাসমান পর্যায়ে আনা যাবে বলে আশা রাখছি।’
নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট শাহ পরাণ ইমন বলেন, ‘বাহিনীর ডুবুরি টিম, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ’র অর্ধশতাধিক ডুবুরি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বড় বড় ওয়্যার রোপ ফেরির নিচে পাস করে প্রত্যয়ের ক্রেনের সঙ্গে অ্যাটাচ করা হবে। যদি অ্যাটাচ করতে পারি তবে ফেরিকে লিভ করার চেষ্টা চালাবো। প্রচুর শীতের কারণে পানিতে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডুবে যাওয়া আটটি ট্রাক ও একটি কাভার্ডভ্যানের মধ্যে এ পর্যন্ত দুটি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ছয়টি ট্রাক উদ্ধার করা যায়নি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান ড. একেএম মতিউর রহমান দুর্ঘটনার দিন বলেছিলেন, ‘ফেরিটি একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নোঙর করা অবস্থায় ডুবে যায়।’ কিন্ত তার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে সুর পাল্টে এখন বলছেন, ‘হয়তো ফেরির তলদেশ ফুটো হয়ে ফেরিটি ডুবে যেতে পারে।’ তবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে কুয়াশার কারণে নোঙর করে থাকা ৯টি ট্রাক নিয়ে ফেরি রজনীগন্ধা ডুবে যায়। এ সময় ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবির। এরপর ফেরিটি উদ্ধারে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তুম।