চালনা থেকে মোংলা: মাঝে কেটে গেছে ৭৪ বছর, নতুন সম্ভাবনার হাতছানি
বাংলাদেশ

চালনা থেকে মোংলা: মাঝে কেটে গেছে ৭৪ বছর, নতুন সম্ভাবনার হাতছানি

বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধাসহ আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে ৭৪ বছর পূর্ণ করলো দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা। রবিবার (১ ডিসেম্বর) ৭৫ বছরে পা রেখেছে আন্তর্জাতিক এ বন্দরটি। এ উপলক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে।

রবিবার বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে বন্দরের সদর দফতর থেকে জেটির মূলফটক পর্যন্ত র‌্যালি ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বেলুন উড়িয়ে দিবসের শুভ উদযাপন করেন। পরে কেক কাটেন তিনি। এর আগে ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি সকল জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজানো হয়।

মোংলা বন্দরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা এলাকায়। তবে ভৌগোলিক কারণে ১৯৫৩ সালে কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয় বাগেরহাটের মোংলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘দ্য সিটি অব লিয়ন্স’ সুন্দরবনের পশুর নদীর জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করে বন্দরের কার্যক্রম সূচনা করে। ১৯৭৭ সালে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে নামকরণ করা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’। প্রতিষ্ঠার পর নৌপথের নাব্য সংকট অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। ১৯৮০ সালের পর থেকে দীর্ঘমেয়াদি ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে বন্দরটির কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা হয়।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, এই বন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। জেটি, মুরিং বয়া এবং অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙরের সুবিধা রয়েছে এ বন্দরে। এ ছাড়াও আমদানি-রফতানিকারকদের জন্য ট্রানজিট শেড, ওয়্যার হাউজ, কনটেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ১৬১টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২টি সহায়ক জলযানের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে বর্তমানে ৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আগত সমুদ্রগামী জাহাজের বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল দূষণ থেকে বন্দর চ্যানেল এবং সুন্দরবন রক্ষা পাবে। মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ, নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১ দশমিক ৫০ কোটি টন কার্গো, চার লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও জানান, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে মোংলা বন্দরের কার্যক্ষমতা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনার ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

বর্তমান অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৯ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি রফতানি হয়েছে। এ ছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতিঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে নাব্য বিরাজমান থাকার কারণে ৫টি জেটিতে একই সঙ্গে সমানসংখ্যক জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল আর ভুটানের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ আর রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে দ্রুততর ও সহজ করবে বলেও জানান তিনি।

এদিন বন্দরের সেরা কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বন্দরের সকল বিভাগ থেকে ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কিবরিয়া হক, সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, সদস্য ( প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান, সচিব কালাচাঁদ সিংহ, সদস্য (পরিচালক প্রশাসন) মো. নুরুজ্জামানসহ বন্দরের বিভাগীয় প্রধান ও বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।

Source link

Related posts

পদ্মা সেতু দিয়ে সময়মতো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে পাটপণ্য

News Desk

মিজানুর থেকে ‘মিজু গ্যাং’, টেলিগ্রামে চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা

News Desk

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে আগুন, তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

News Desk

Leave a Comment