অটিস্টিক শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি লেখাপড়ার জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে সিলেটে। নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকায় ১২ শতক জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ‘অটিস্টিক মডেল স্কুল’। ইতেমাধ্যে চারতলা ভবনের একতলার কাজ শেষ হয়েছে। মাঝে অর্থ সংকটের কারণে কাজ বন্ধ থাকলেও এবার সেই সংকট কেটেছে। জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়নকাজের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ভবনের কাজ শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে স্কুলটি চালুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশে ৭২টি অটিস্টিক স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে নির্মিত অটিস্টিক মডেল স্কুলটি হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত। এটি দেশের প্রথম অটিস্টিক মডেল স্কুল। যেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে অটিস্টিক মডেল স্কুলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২। ১১ হাজার ২০০ স্কয়ার ফুটের স্কুলের চারতলা ভবনের নামকরণ করা হবে সিলেটের প্রয়াত চিত্রশিল্পী অরবিন্দ দাস গুপ্তের নামে। ইতোমধ্যে নকশা অনুসারে ভবনের একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মাঠি ভরাটসহ অন্যান্য কাজের জন্য দুই দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি জেলা পরিষদ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ দ্রুত ভবনের কাজ শেষ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে অটিস্টিক শিশুদের জন্য নগরের কুমারপাড়া এলাকায় একটি বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে। এর নাম আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুল। এখানে ছেলেমেয়েসহ ৭৫ জনকে পড়ালেখা, আর্ট ও গান শিখানো হচ্ছে। তাদের দেখভালের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ২৯ জন। কিন্তু অটিস্টিক শিশুদের থেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়ার কথা চিন্তা করে অটিস্টিক মডেল স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেটি চালু হলে অটিস্টিক শিশুদের চাহিদা অনুসারে সব ধরনের সেবা দেওয়া যাবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের আওতায় অটিস্টিক মডেল স্কুলটি পরিচালিত হবে। নতুন ভবনের অত্যাধুনিক নকশা তৈরি করেছেন অপু চক্রবর্তী ও আর কে চৌধুরী আনন্দ। চারতলা এই ভবনের নিচতলায় থাকবে চারটি থেরাপি সেন্টার। চাহিদা অনুযায়ী শিশুদের থেরাপি দেওয়া হবে। এছাড়া ভবনে থাকবে ৭০০ স্কয়ার ফুটের আদর্শ অডিটোরিয়াম, আর্ট গ্যালারি, অভিভাবক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং শ্রেণিকক্ষ। অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহার উপযোগী করে ভবনটি তৈরি করা হচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বরে স্কুলটি চালুর লক্ষ্যে কাজ করছি জানিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অটিস্টিক স্কুলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যখন যে বরাদ্দ আসে, তা সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অটিস্টিক শিশুদের জন্য আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে। এজন্য অটিস্টিক মডেল স্কুল চালু করছি আমরা। এখানের শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে শিশুরা।’
দেশের প্রথম অটিস্টিক মডেল স্কুলটি অত্যাধুনিক হবে বলে জানালেন আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল গণি হিমন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলে আসা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেরাপির প্রয়োজন হয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও স্কুলে নানা সীমাবদ্ধতা আছে। অটিস্টিক মডেল স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষার্থীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে।’
বিভাগের সব অটিস্টিক শিক্ষার্থীকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য জানিয়ে ইসমাইল গণি বলেন, ‘তারা যদি লেখাপড়ায় এগিয়ে যায়, তাহলে স্নাতক ও উচ্চতর ডিগ্রির চালুর চিন্তাভাবনা করছি আমরা।’