দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার ১৯টি শকুনকে চিকিৎসার পর অবমুক্ত করা হয়েছে। শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যান শালবনে শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে এগুলো অবমুক্ত করা হয়।
কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আবর্জনা ও মৃত প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখায় শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। তবে বিভিন্ন কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে এদের দেখা মেলে না। বেশিরভাগ শকুনের বাস হিমালয়ের দেশে। সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে এবং বিশেষ করে শীতের সময়ে ঠান্ডার সাথে লড়তে না পেরে উড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চলে আসে।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার ফলে অনেক শকুনই অসুস্থ হয়ে লোকালয়ে পড়ে যায়। এ সময় অনেকেই ধরে বন বিভাগকে খবর দেয়। বন বিভাগ সেসব শকুনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থগুলো মুক্ত করে দেওয়া হয়। যেসব শকুনের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাদেরকে রাখা হয় শালবনে শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় অসুস্থ হয়ে পড়া শকুনদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে।
শকুন অবমুক্ত করার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লা হারুন।
এ সময় বন সংরক্ষণ ও প্রকল্প পরিচালন উপ-প্রধান গোবিন্দ রায়, আইইউসিএন’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন সংরক্ষণ, বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্লা রেজাউল করিম, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ, বন সংরক্ষক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের তথ্যমতে, শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। প্রতি বছর উদ্ধারকৃত ২০ থেকে ২৫টি শকুন সুস্থ করার পর অবমুক্ত করা হয়। গত আট বছরে ১৪৯টি শকুনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে সুস্থ করার পর মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভেটেরিনারি বিভাগের চিকিৎসক খাদিজা বেগম বলেন, শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা ও খুরা রোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবদের রক্ষা করে। তাই তাদেরকে প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জীবচক্রের জন্য শকুনের গুরুত্বপূর্ণ ভূকা রয়েছে। তবে বড় বড় গাছ না থাকা এবং খাদ্যের অভাবে শকুন বিলুপ্তি ঘটছে। তাছাড়া বাংলাদেশে শকুনের বিলুপ্তির অন্যতম আরেকটি কারণ ডাইক্লোফেনাকের বেশি ব্যবহার।
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানায়, আমরা যেখানেই শকুন পাচ্ছি তাদেরকে চিকিৎসা দিচ্ছি। হয়তো কোনও শকুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেই হয়। আবার অনেকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাও দিতে হয়।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে কেন্দ্রটি চালু করা হয়। এরপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪৯টি শকুনকে সুস্থ করে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৩২টি শকুন এখানে আনা হয় এবং চিকিৎসা শেষে মুক্ত করে দেওয়া হয়।