চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্য
বাংলাদেশ

চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্য

কুড়িগ্রামের চিলমারীর ঐতিহ্যবাহী নৌবন্দরের চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে যাত্রী পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ঈদের আগ থেকেই যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগ তুললেও এ নিয়ে প্রতিকারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রবিবার (১৪ এপ্রিল) নৌবন্দরে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথের নিয়মিত ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা হলেও ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে তা বাড়িয়ে ১৫০ থেকে ২০০ করে নেওয়া শুরু করেছে ইজারাদার। এ ছাড়াও মোটরসাইকেল ভাড়া ১৫০ টাকা এবং তা ওঠানামার জন্য আরও ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ একজন যাত্রী মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রা করলে তাকে এই নৌপথে ৫০০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে এমন নৈরাজ্য চলমান থাকলেও এসব বন্ধে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই।

ঘাট কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই নৌরুটে যাত্রীরা ইজারাদারের হাতে জিম্মি বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

জানা গেছে, চিলমারী নৌবন্দরের রমনা ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএ এর আওতাধীন। রেমেলিয়া ট্রেড লিংক নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঘাটটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছে। রমনা ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্র নৌপথে রৌমারী ও রাজিবপুরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে নিয়মিত যাত্রী পারাপার করে ইজারাদার। রৌমারী ও রাজিবপুর নৌপথে নৌকা ভাড়া নেওয়া হতো যথাক্রমে ১০০ ও ১২০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে সড়ক ও রেলপথের ধকল এড়াতে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ঈদযাত্রা করেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করে ইজারাদার। শুধু অতিরিক্ত ভাড়া নয়, নৌকার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করছেন তারা। কোনও যাত্রী এতে আপত্তি জানালে তাকে নৌকা থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

সরেজমিনে রবিবার সকালে রমনা ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের পন্টুনের ওপরে যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। যাত্রীদের কাছে টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেল ভাড়া বাবদ নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এ নিয়ে কোনও আপত্তি কিংবা প্রতিবাদে কর্ণপাত করছে না ইজারাদারের লোকজন।

নৌপথের যাত্রী হিসেবে টিকিট নেওয়া নুর মোহাম্মদ, মুকুল মিয়া, খাদেমুল ইসলামসহ যাত্রীরা বলেন, ‘যাত্রা খরচ বাঁচাতে নদী পথে এসেছি। এ পথে মাত্র ১১-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলসহ খরচ নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। তাহলে আমরা যাবো কোন পথে?’

লালমনিরহাট এলাকার বাসিন্দা এনজিওকর্মী সাফায়েত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যাতায়াত খরচ কমাতে তিনি গাইবান্ধা হয়ে না গিয়ে এ পথে এসেছিলেন। কিন্তু এই পথে এসে তাকে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা গুনতে হচ্ছে । তার প্রশ্ন, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষগুলো যাবে কোন পথে? ঈদ পরবর্তী অফিস করার জন্য তারা অল্প ভাড়ায় নদী পথকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সে পথেও নানা বিড়ম্বনা ও নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেন।

চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্য

রেমেলিয়া ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী ও ঘাট ইজারাদার শহীদুল্লাহ কায়সার ইমু অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা স্বীকার করলেও তার দায় দিয়েছেন নৌকার মালিকদের। তিনি বলেন, ‘রাজিবপুরের ভাড়া ১৩০ সেখানে নিচ্ছে ১৫০ টাকা, রৌমারীর ভাড়া ১০০ টাকার জায়গায় নিচ্ছে ১৫০। তাতে কী মহাভারত অশুদ্ধ হচ্ছে?’

এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বৈধতা প্রশ্নে ইমু বলেন, ‘বৈধতা নেই। কিন্তু নৌকাগুলো ফেরত আসার সময় খালি আসতে হয় তাই নৌকার মালিকরা ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে। এখানে আমার কিছু নেই,আমি যাত্রী প্রতি ৫ টাকা হারে টোল পাই মাত্র।’

তবে এই ইজারাদারের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। ফিরতি পথেও নৌকাগুলোতে যাত্রী বোঝাই দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসার আসাদুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভি করেননি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘যা ভাড়া তাই নিতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই।’ বিষয়টি দেখতে ঘাটে যাবেন বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘এমনটা হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি প্রতিকারে প্রয়োজনে জেলা থেকে টিম পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Source link

Related posts

হিলিতে তাপমাত্রা বাড়লেও বইছে হিমেল হাওয়া, বৃষ্টির আশঙ্কা

News Desk

ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে পর্যটক

News Desk

আগুনে নিঃস্ব হয়ে গেলাম

News Desk

Leave a Comment