Image default
বাংলাদেশ

ছাতা সারাইয়ের কারবারে ব্যস্ত গাইবান্ধার কারিগরেরা

এবারের বর্ষাটা একটু আগেভাগেই এসেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রায় সময়ই বৃষ্টি দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মধ্য জৈষ্ঠ্যেই যেন আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে, সঙ্গে নিয়ে এসেছে ভারী বৃষ্টি। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন যৌবন ফিরে পেতে শুরু করেছে। বর্ষাকালে প্রকৃতির আচরণ থাকে সাধারণত একটু ভিন্নরকম। এই রোদ, এই ঝুম বৃষ্টি। কখনো থেমে থেমে, আবার কখনো একটানা মুষলধারে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। তবে রোদ-বৃষ্টি যাই হোক এ সময় ছাতাই যেন হয়ে উঠে মানুষের প্রিয়সঙ্গী।

এ সময়ে ঘরের বাইরে পা রাখতে প্রথমেই যা সঙ্গে নিতে হয় তা হলো ছাতা। আর সে ছাতা যদি ফুটো কিংবা ভাঙা হয় তবেই যত বিপত্তি। আর এই বিপত্তির কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে ছুটে যেতে হয় ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের কাছে। আর তাই বর্ষায় ভরসা এসব কারিগররা। বছরের অন্য সময়গুলোতে ছাতা মেরামতের কাজ না থাকলেও বর্ষার এ মৌসুমটুকুতে পুরোদস্তুর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। কারন যাদের বাসা বা বাড়িতে নষ্ট ছাতা রয়েছে তারা মেরামত করাতে ছুটে আসেন কারিগরের কাছে। এ যেন এক যুৎসই মৌসুমী কারবার।

ছাতা মেরামতের এই কারবারকে কারিগররা নিজেরাই বলে এটা বর্ষাকালের অস্থায়ী কারবার। বিশেষ করে লেপ-তোষক সেলাইয়ের ধুনকর, জুতা-স্যান্ডেল মেরামতকারী রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনসহ অন্যান্য পেশার লোকজনও বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলেই এই পেশাতে ঝুঁকে পড়ে। কেননা বৃষ্টির মৌসুম না এলে সাধারণত মানুষ ছাতা ব্যবহার করেন না। বৃষ্টি শুরু হলেই প্রয়োজন পড়ে বাড়িতে রাখা পুরাতন ছাতাটির। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ মাস অযত্মে অবহেলায় পড়ে থাকা ছাতাটি মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বর্ষায়। ফলে বর্ষা এলেই ছাতা মেরামতের কারিগরদের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এজন্য সুযোগ বুঝে ছাতার কারিগররা বেশি দামে মেরামত ও ছাতা সারাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন। আর এ কারণেই তারা অন্য পেশা ছেড়ে এসে অস্থায়ী এবং লাভজনক এই মৌসুমী পেশায় যুক্ত হন।

গাইবান্ধা শহরের স্টেশন রোডের কাচারী বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বর্ষার এই সময়ে ছাতা সারাইয়ের রমরমা কারবারে ব্যস্ত সময় পার করেন কারিগররা। এই এলাকায় একসাথে ৮ থেকে ১০ জন ছাতা মেরামতকারী সারিবদ্ধভাবে বসে কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই অস্থায়ী। এদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে যেহেতু শ্রমজীবী মানুষের কাজের অভাব থাকে, সেজন্য বিকল্প পেশা হিসেবে তারা ছাতা সারাইয়ের কাজটি শিখে নিয়েছেন যাতে অভাবের সময়টিতে তারা এই কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।

এবারের বর্ষাতেও গাইবান্ধায় বেড়েছে ছাতা কারিগরদের চাহিদা। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন নষ্ট ছাতা মেরামত করতে। রোজ আটশ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন একেকজন কারিগর। তবে বছরের অন্য সময়ে অনেক কারিগরই ছাতা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক ছাতা তৈরি করে থাকেন। গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার ধারে ছাতা মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকা কয়েকজন কারিগরের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

কাচারী বাজার এলাকায় অবস্থান করা সদর উপজেলার পূর্বকোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের ছাতা কারিগর আকাশ মিয়া ও রায়হান বলেন, এখন ছাতা মেরামতের ভরা মৌসুম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আয়-রোজগারও হচ্ছে ভালো। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ কাজের সাথে জড়িত। এছাড়াও জেলা শহরের ভিএইড রোডের জালাল মিয়া, বানিয়ারজান এলাকার সাইফুল ইসলাম, বোর্ডবাজার এলাকার শফি মিয়াসহ অনেকেই ছাতা মেরামতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।

Related posts

বাংলাদেশকে টপকে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম

News Desk

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৫০ শিক্ষার্থীর মেডিকেলে বাজিমাত

News Desk

কৃতিত্ব অর্জনে পুলিশ সদস্যের সন্তানদের মেধা বৃত্তি

News Desk

Leave a Comment