ছুটির দিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর জমে উঠেছে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। মেলার স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লোকসমাগম ও বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আয়োজক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, মেলায় আজ (শুক্রবার) লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। দুপুর থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করে। বিকাল থেকে ঢল নামে। এতে মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিকাল থেকে মেলার গেটে টিকিট সংগ্রহ করতে কাউন্টারগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ঢল নামে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। মেলার স্টলগুলোতে পা ফেলার জায়গা ছিল না। মেলার একপাশে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অর্থাৎ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা হতেই সেখানে উৎসুক দর্শনার্থীদের ঢল নামে। তারা নেচে-গেয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করেন। এবারের মেলার আসরে গানের আয়োজন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
উত্তরা থেকে মেলায় বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিকাল থেকে মেলায় অনেক লোকসমাগম হয়েছে। ছুটির দিন হওয়ার অনেক ভিড় হয়েছে। ভিড়ের কারণে মেলায় ঢুকতে কষ্ট হয়েছে। তবুও বন্ধুদের নিয়ে মেলা ঘুরে দেখেছি। খাবারের দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। তা ছাড়া মেলার একপাশে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এটা বেশ ভালো লেগেছে। বন্ধুদের নিয়ে বেশ উপভোগ করেছি।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন শিক্ষার্থী লিন্ডা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় ছাত্র আন্দোলনের অনেক স্মৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জুলাই চত্বর, শহীদ মুগ্ধ কর্নারসহ জুলাই- আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেককিছু এই মেলায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব দেখে খুব ভালো লাগছে। এ ছাড়া মেলায় মিনি শিশুপার্ক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা খুব ভালো লেগেছে। আজকে শীতের তীব্রতা কম থাকায় লোকসমাগম অনেক বেশি হয়েছে।’
মিয়াকো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসায়ী আনিস আলম বলেন, ‘ছুটির দিনে অনেক লোক হয়েছে। আজ বেচাবিক্রিও অনেক বেশি হয়েছে। লোকসমাগমও বেশি। দোকানে পণ্য বেচাবিক্রির ধুম পড়েছে। আশা করছি, এভাবে কয়েকদিন বিক্রি করতে পারলে বেশ ভালো হবে।’
নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ নামে কাপড় ব্যবসায়ী নাহিদ হাসান বলেন, ‘মেলা শুরুতে শীতের তীব্রতাসহ নানা কারণে সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে আজ লক্ষাধিক লোকসমাগম হয়েছে। বেচাবিক্রি অনেক ভালো হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় আজ অনেক লোকসমাগম হয়েছে। হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। আমরা আমাদের আয়োজনের কোনও কমতি রাখি নাই। ফলে আমাদের প্রত্যাশা, বিগত সময়ের চেয়ে এবার অনেক বেশি ভালো হবে।’
প্রসঙ্গত, এবারের মেলার আসরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে। দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামিন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।
ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকেই ঘরে বসে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। আবার কেউ কাটতে না পারলে মেলা প্রাঙ্গণে এলে টিকিট বুথ থেকে কেটে নেওয়া যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য সময়ক্ষেপণ কিংবা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।