‘জয়ী হলে পদ্মার ভাঙন থেকে হরিরামপুরবাসীকে রক্ষা করাই আমার প্রধান কাজ’ 
বাংলাদেশ

‘জয়ী হলে পদ্মার ভাঙন থেকে হরিরামপুরবাসীকে রক্ষা করাই আমার প্রধান কাজ’ 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদরের তিন ইউনিয়ন) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। তার প্রতীক ট্রাক। দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে লড়ছেন। ভোট সামনে রেখে গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি গ্রামে। করছেন পথসভা ও উঠান বৈঠক। নিজ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে এমপি নির্বাচিত হলে ১০টি উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটার মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে মতামত জানিয়েছেন এই প্রার্থী।

বাংলা ট্রিবিউন: ভোটের পরিবেশ কেমন?

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু: এই আসনের প্রত্যেক ভোটার আমাকে সজ্জন মানুষ হিসেবে চেনেন। আমি কিংবা আমার কর্মী-সমর্থকরা কোনও প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে বিরোধে জড়াইনি। তবুও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের কারণে ভোটের মাঠে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। নৌকার প্রার্থীর মদতে তার অনুসারীরা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছেন। এরপরও আশা করছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু: জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা ট্রাক প্রতীকের  জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আমার পক্ষে ভোট করছেন। এর পাশাপাশি মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি শতাভাগ আশাবাদী, এমপি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: কোনও ধরনের হুমকি-ধমকি পাচ্ছেন কিনা?

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু: শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থীর আত্মীয় সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান আমাদের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলামকে হুমকি দিয়ে আসছেন। ট্রাকের প্রচার থেকে সরে যেতে বলছেন। তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে প্রচারণা চালানোর সময় আমার কর্মী শাহিনুর ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক ও মো. মিনহাজের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী ইস্কান্দার। কেউ ট্রাকে ভোট দিলে চাকার তলে ফেলার কথা বলেছেন। হত্যার হুমকির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার। এছাড়া আমার আরেক কর্মীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় হরিরামপুর থানায় আমার কর্মী সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নৌকার কর্মী ফরিদ মোল্লা ও রিফাত চৌধুরীসহ ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এগুলো ভোটারদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। কিন্তু এসবের প্রতিকার পাইনি। এরপরও বিশ্বাস আছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভোট সুষ্ঠু হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন?

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু: পুলিশ, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত ভালো। তারা নিরপেক্ষ থাকলে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে পারবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নে যেসব ভূমিকা রাখতে চান?

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু: হরিরামপুর পদ্মার ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ১৩টি ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে পদ্মার ভাঙন থেকে হরিরামপুরবাসীকে রক্ষা করা আমার প্রধান প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করবো। নির্বাচনি এলাকার রাস্তাঘাট পাকাকরণ ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করবো। শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে অগ্রাধিকার দেবো। গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ করবো। নদীভাঙনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করবো। গরিব-অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবো। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী সবার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করবো। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আরও শিল্পকারখানা গড়ে তুলবো। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিরসনে তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবো।  

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর ১০ প্রতিশ্রুতি

মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন নিজ দলের চার স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, সিংগাইর উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মুশফিকুর রহমান খাঁন হান্নান এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল।

জাহিদ আহমেদ টুলু দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। নির্বাচনি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিজের অর্থে মসজিদ নির্মাণ ও বিভিন্ন মসজিদের দুই শতাধিক ইমামকে হজ করিয়েছেন। করোনাকালীন ৫০ হাজার মানুষকে একমাস খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। নারীদের সেলাই মেশিন দিয়ে সচ্ছলতায় ফেরানোসহ বেকারদের অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি ও বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।ক্যানসারসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসার অর্থ দিয়েছেন। স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজশিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ দিচ্ছেন। যা আগামীতেও অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরই মধ্যে লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে দেওয়ান ইলমা আহমেদ বাবার নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন, কেন্দ্রে যেতে তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি সবার কাছে বাবার জন্য ভোট ও দোয়া চেয়েছেন।

নির্বাচনি পথসভায় বক্তব্য রেখেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর মেয়ে দেওয়ান ইলমা আহমেদ

ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি এবং জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, ‘তবে ভোটাররা শঙ্কিত। কারণ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের লোকজন ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ভোটাররা বলছেন, ভাই ভোট দিতে পারবো তো? ভোট হবে তো? ভোটাররা এই ধরনের শঙ্কায় রয়েছেন। আমরা এখনও এই শঙ্কা দূর করতে পারিনি। আমরা ভোটারদের শুধু বলেছি, আপনারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। যাকে খুশি তাকে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবার সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর ভোট হবে। শতভাগ আশা রাখছি, জনগণের ভোটে জয়ী হবো।’

Source link

Related posts

বছরে ৪০ হাজার টন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে

News Desk

খুলনার উপকূলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত লোকালয়

News Desk

এসআই পরিচয়ে পাত্রী দেখতে এসে যুবক গ্রেফতার

News Desk

Leave a Comment