মোহাম্মাদ নাজিউর রহমান৷ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ডুলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দেড় বছর আগে পাড়ি জমান ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে। রাশিয়ার হামলার পর তিনি প্রাণ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পোল্যান্ডে। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন। নাজিউরের সঙ্গে কথা হয় তার বন্ধু তানভীর দিপুর। দিপুর কাছে তিনি তুলে ধরেছেন সেখানকার প্রবাসী এবং স্থানীয় জনগণের দুর্দশার কথা।
শনিবার রাতে দিপুর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের কুমিল্লা প্রতিনিধির। নাজিউরের বরাত দিযে দিপু বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নাজিউরের অফিস ও অ্যাপার্টমেন্টে বোমা হামলা হয়। তবে কোথা থেকে এসব বোমা আসছিল, তা সে বুঝতে পারেনি। শুধু মোবাইলফোন ও চার্জার নিয়ে ঘর ছাড়ে সে। প্রাণে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিল একটি বাংকারে। সেখানে তার সঙ্গে আরও অন্তত ৫০ জন শিশু ও বৃদ্ধ আশ্রয় নিয়েছিল।
নাজিউর যুদ্ধ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তিন দিন খালি পেটে নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করে অপেক্ষা করছিলাম কীভাবে ইউক্রেন সীমান্তে যাওয়া যায়৷ সেখান থেকে যাবো পোল্যান্ড। এমন চিন্তা নিয়ে কয়েকবার বাংকার থেকে বের হয়েও যেতে ব্যর্থ হই। এর মধ্যে খবর আসে আমার দুই ভারতীয় বন্ধু বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন।
তবুও ঝুঁকি নিয়ে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে একটি ট্রেনে করে পাঁচশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইউক্রেনের সীমান্তে আসতে সক্ষম হই। তারপর সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেই। তবে যখন আমি ট্রেনে উঠি ওই সময় চার জন বৃদ্ধলোক ট্রেনে উঠতে পারেননি। জানি না তারা ওই ধ্বংসস্তূপে এখনও বেঁচে আছেন কিনা।’
দিপুকে নাজিউর জানান, এই কদিনে কিয়েভে সম্মুখ যুদ্ধ হয়নি বললেই চলে। শুধু দূর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বড় বড় ভবনগুলো শেষ করা হচ্ছিল। প্রতিটি বোমার যেন ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। নিজের চোখের সামনে কি হচ্ছিল বুঝার উপায় নেই। হঠাৎ বিস্ফোরণ, হঠাৎ অগ্নিকুণ্ড আর হঠাৎই চোখের সামনে মৃত্যু ঘটছিল।
নাজিউরের বন্ধু তানভীর দিপু শনিবার রাতে আরও জানান, গত তিন দিন ধরেই নাজিউরের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। সে বর্তমানে শরণার্থী শিবিরে আছে। সে নিরাপদে আছে। তার মা ও বোন লন্ডনে আছে। তাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।