জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কা পিতৃহারা আয়েশার
বাংলাদেশ

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কা পিতৃহারা আয়েশার

বাবাকে হারিয়েছে আগেই। বিধবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন আয়েশা সিদ্দিকাকে। বিধবা মায়ের স্বপ্ন তার মেয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে, দেশের জন্য কাজ করবে। নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের গোবড়ার ডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারপরও কপালে চিন্তার ভাঁজ মা রুমি আক্তারের। অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়েই তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

আয়েশা নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের গোবড়ার ডাঙ্গা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। এবছর পঞ্চপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২৩ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করে।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আয়েশা সিদ্দিকা আমার ইউনিয়নের ৯নং ওয়াডের গোবড়ার ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মৃত্যু আইয়ব আলী একজন গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। গত তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন। পিতার অবর্তমানে আমরা স্থানীয়ভাবে আয়েশাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে এসএসসি পর্যন্ত এগিয়ে নিয়েছি। কিন্তু মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য দেশবাসীর কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বিধবা মা। রুমির পাশাপাশি আমিও এই মেধাবী ছাত্রীর জন্য লেখাপড়ার খরচ চালাতে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাই।’

মায়ের বুকের লালিত স্বপ্ন পুরণ করতে চায় আয়েশা সিদ্দিকা। কিন্ত শিক্ষা লাভের অর্থ যোগানের ভাবনা কুঁড়ে-কুঁড়ে খাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকাকে। তাহলে কি অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হবে আয়েশার? কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই কিশোরী বলে, ‘টাকার অভাবে আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারবো না? আমার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? গরীব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আজ অবধি প্রাইভেট-কোচিং কাকে বলে জানি না। ওপরের ক্লাসের আপা-ভাইয়াদের বই, আর হাতে লেখা নোট ছিল আমার একমাত্র ভরসা।’

আয়েশার বাবা ছিলেন একজন গার্মেন্টসকর্মী। পরিবারে নুন আনতে পান্থা ফুরায়। আয়েশা জানায়, বাবার মুত্যুর পর তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এছাড়াও সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তি টাকা পেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখা-পড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্ত উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে কীভাবে আসবে, এ চিন্তা তাকে সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে।

তার ভাষ্য, ‘আমি উচ্চ শিক্ষা লাভে মানবতার মা ও শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদান কিংবা কোনও হৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এলে মায়ের স্বপ্ন আর আমার উচ্চ শিক্ষা লাভের ইচ্ছা একবারেই চিরতরে থেমে যাবে।’

আয়েশা সিদ্দিকার মা রুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী মৃত্যুর পর আমার তিন কন্যা সন্তানের ভরন-পোষণ কীভাবে চালাবো কুল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। আমাদের তো বাড়ির ভিটাও নেই। অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সন্তাদের লেখাপড়ার খরচ ও একমুঠো ভাত মুখে তুলে দিতে প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে যাচ্ছি। গরীবে কথা আল্লাহ কবে শুনবে জানি না।’

আয়েশার উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার পঞ্চপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মেট্রিক জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করলো। আর দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণি ও তৃতীয় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখা-পড়া করছে।’ তিনি বড় মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার পড়াশোনা জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেন।

পঞ্চপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জুয়েল জানান, ‘আয়েশা সিদ্দিকাকে সত্যিই একজন মেধাবী ছাত্রী। তার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। এখন তার লেখাপড়ায় কেউ সহযোগিতা না করলে, হয়তো তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে। তাই এমন মেধাবীদের লালন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

এলাকার চেয়ারম্যান ওয়াহেদুল ইসলাম সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। কেউ তার পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৭২২-৮০৩০৯৬ এই নম্বরে যোগাযোগ বা অর্থ সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Source link

Related posts

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিষ্টি বিতরণ

News Desk

করোনার সংক্রমণের জন্য রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ

News Desk

আবাসিক হোটেল থেকে সোনা ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

News Desk

Leave a Comment