একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ও প্রগতিশীল পেশাজীবী পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, ‘বাঙালির ইতিহাস কয়েক হাজারের বছরের। ১৯৭১ সালের মতো সশস্ত্র জনযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে আমি আর পড়িনি। আলবেনিয়া ও ভিয়েতনাম জনযুদ্ধও বিশাল। জনযুদ্ধে আলবেনিয়ায় ১৫ লাখ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল আর ভিয়েতনামে সাত লাখ। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৩০ লাখের বেশি মানুষ। এরকম ইতিহাস আর কোনও দেশের নেই।’
মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ‘মুক্তিযোদ্ধা-সৈনিক হত্যা ও হত্যার রাজনীতি: ১৯৭৫ থেকে বর্তমান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।।
ড. অনুপম সেন বলেন, ‘যারা ১৯৭১ সালে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ তার সপরিবারকে হত্যা করেছে। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত হাজার নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে ও ফাঁসি দিয়ে খুন করেছে তারাই। বঙ্গবন্ধু যখন নতুনভাবে বাংলাদেশটিকে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছিলেন, তখন তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই নৃশংশ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। জিয়াউর রহমান একজন হৃদয়হীন ব্যক্তি। তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমি নিজে তার সাক্ষী। যখন সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তখন তিনি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন।’
সেমিনারে শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমান যেভাবে মানুষ মেরেছিল ওটা ছিল একটি পদ্ধতি। ওটা ছিল গুলি করে ফাঁসি দিয়ে মানুষ হত্যার পদ্ধতি। মানুষের রক্তে রঞ্জিত তার হাত। খালেদা জিয়ার হাতও মানুষের রক্তে রঞ্জিত। তাদের ছেলেও একই রকম। জিয়াউর রহমান সে রক্তে রঞ্জিত হাত দিয়ে গেছে তার স্ত্রী, ছেলে ও দলকে। খালেদা জিয়া মানুষ মেরেছে গুম করেছিল। ইতিহাস খুবই নির্মম। কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাসের সে নির্মম খুনি জিয়াউর রহমান বারো আউলিয়ার দেশ বলে খ্যাত চট্টগ্রামের মাটিতেও ঠাঁই পাইনি। তার ছেলে তারেক জিয়া দেশ থেকে টাকা চুরি করে লন্ডনে বসে আমোদ-ফূর্তি করছে। লবিস্ট নিয়োগ করছে। হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের দলের নেতারা কেউ তাদের সঙ্গে নেই।’
চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মো. ইউনুছের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা বিভাগের সাবেক ডিন সেকান্দর চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বেণু কুমার দে, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন ও চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক।