গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর নিয়মিত খাদ্যের (পার্কের ঘাস) মধ্যে সিসা ও বায়ু দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক ও জেব্রার মৃত্যু নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, ‘ল্যাব পরীক্ষায় পার্কের ঘাসে লেডের (সিসার) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পার্কের আশপাশে শিল্প এলাকা। তা ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিশার জ্বালানি ও মবিল থেকে কালো ধোঁয়ার প্রভাব এবং একই সঙ্গে সিসার উপস্থিতিতে বিষক্রিয়া ঘটেছে। একদিকে বায়ুদূষণ, অন্যদিকে প্রচণ্ড শীতে নিউমোনিয়ায় আটটি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এসব কিছু জেব্রার মতো অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। মারা যাওয়া ১১টির মধ্যে তিনটি জেব্রার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। তবে কতটা আঘাতে এটি হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। ওই তিনটি জেব্রার মধ্যে লড়াই হয়েছিল বলে জানা যায়। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর ছবি দেখে এ বিষয়টি শনাক্ত করা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেব্রাগুলো ভাই-বোন, বাবা-মায়ের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়েছে। একই পরিবারের মধ্যে প্রজনন ঘটলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। জেব্রা ঘোড়া প্রজাতির প্রাণী। একই পাত্রে বানর খাবার খেলেও বানর থেকে জেব্রার দেহে জীবাণু ছড়ানোর কথা নয়। মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতোই জেব্রারও নিউমোনিয়া হতে পারে। তা ছাড়া জেব্রা ব্যবস্থাপনায়ও সমস্যা থাকতে পারে। সবগুলো বিষয় চিহ্নিত করে প্রাণীর সুস্থতার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমন একটি পার্কে এতগুলো প্রাণী, একজন মাত্র ভেটেরিনারি চিকিৎসক কীভাবে মোকাবিলা করবেন? জীবাণুর সংক্রমণ হলে সবগুলো একসঙ্গে একজনের পক্ষে দেখভাল করা সম্ভব নয়।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ল্যাব পরীক্ষার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় পার্কে মন্ত্রাণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের মিটিং হবে। সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পার্কে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহ মারা যায়। এসব প্রাণী মৃত্যুর ঘটনায় একটি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১০ দিন মেয়াদে ২৬ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পৃথক আরেকটি কমিটি করেছে।