জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আলাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ
বাংলাদেশ

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আলাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ফেনীর পরশুরামের আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি এ আবেদন জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলী হোসেন নিজেই।

দুদকে দেওয়া আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। নাসিমের বাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম পৌরসভার গুথুমা গ্রামে। যার তিন পাশে সীমান্ত। তার নেতৃত্বে এই সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা থেকে অবৈধভাবে মাদক, ফেনসিডিল, গরু ও শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক আসে বাংলাদেশে। দেশ থেকে পাচার হয় স্বর্ণ। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার পদবি ব্যবহার করে প্রশাসনে বদলি, পদায়ন থেকে শুরু করে বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেন নাসিম। ফেনীকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বালুমহাল, টেন্ডার বাণিজ্য, সালিশি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও সীমান্ত থেকে চোরাকারবার চলতো তার নির্দেশে। তাকে ২০ শতাংশ কমিশন না দিলে কোনও টেন্ডারই পেতেন না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই বুঝে নিতেন কমিশন। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকে ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে গেছেন নাসিম। গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই খাত থেকে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।

আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম। এস আলমের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডের মালিকানায়ও নাসিম রয়েছেন। প্রতি মাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অংকের চেক নাসিমের এবং তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর নামে জমা হয়। শুধু এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি।

গুলশানে শত কোটি টাকার বাড়ির তথ্য নির্বাচনি হলফনামায় গোপন করেছেন নাসিম। ওই বাড়িটির তথ্য নির্বাচনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। অবশেষে তার হলফনামা দেখে এসব সম্পদের তদন্তে নেমেছে দুদক। হলফনামায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষিজমি ১০ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা, তার স্ত্রীর ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৬ টাকা, অকৃষি জমি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। তার রয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের তিনটি দালান (আবাসিক ও বাণিজ্যিক)। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের ৬টি ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০১ টাকা মূল্যের ৪টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট।

আবেদনপত্রে আরও বলা হয়, পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ। জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন নাসিম। তাই তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সব সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Capture1

দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ১৯৮৬-২০০৯ পর্যন্ত উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তার ও স্ত্রীর ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই সময়ে অন্য যেসব উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন তারাও কী এমন শত কোটি টাকার মালিক হতে পেরেছেন? ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নাসিম রাজধানীর গুলশান এলাকায় এনই(কে) ব্লকের ৮৩ নং সড়কের ১৩/বি প্লটটি জমি ও ভবনসহ কিনে নেন। জমির পরিমাণ ১২ কাঠা। যদি জমির সর্বনিম্ন মূল্য কাঠাপ্রতি ১০ কোটি টাকা ধরা হয়, তাহলে ১২ কাঠার দাম ১২০ কোটি টাকা। যদিও তার হলফনামায় এই বাড়ি ও জমির বিস্তারিত উল্লেখ নেই। তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Source link

Related posts

বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা চলছে হাত পেতে

News Desk

‘৩০০ টাকা খরচ করে ৪৫ টাকার সরকারি ওষুধ পেলাম’

News Desk

ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টেন্ডার বাক্স লুট, যুবদল নেতা আহত

News Desk

Leave a Comment