Image default
বাংলাদেশ

ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং, যেকোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

জামালপুর শহরের ব্যস্ততম এলাকা গেটপাড়। সেখানে রেললাইন পারাপারে বৈধ লেভেল ক্রসিং ও গেটম্যান আছে। তবে যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য গেট ব্যারিয়ার না থাকায় যেকোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনটি বড় জংশন। এই স্টেশন থেকে দুটি রেলপথ দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন ও তারাকান্দি হয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত গেছে। জামালপুর রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম পাশে পৌর শহরের ব্যস্ততম গেটপাড় এলাকার প্রধান সড়কের ওপরের লেভেল ক্রসিংটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে অরক্ষিত পড়ে থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেননি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরের গেটপাড় এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুটি রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন ১২ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। একমুখী চলাচলের সড়ক থাকাকালীন গেটপাড় এলাকায় টি-৯৪ নম্বরের একটি গেট ব্যারিয়ার স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালে যানজট নিরসনের জন্য একটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ শুরুর আগে সড়কের দুই পাশের জায়গা অধিগ্রহণ করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়। সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় আগের গেট ব্যারিয়ারটি এখন কাজে আসছে না। সেখানে নতুন করে গেট ব্যারিয়ার না করায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও বিভিন্ন যানবাহন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গেটপাড় এলাকায় মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাক এবং মানুষের জটলা সবসময় লেগেই থাকে। ট্রেন চলে এলে অর্ধেক সড়কে গেট ব্যারিয়ার বাকি অর্ধেকে দাঁড়িয়ে মানুষ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন গেটম্যানরা।  

লেভেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গেটম্যান মো. রিপন মিয়া, শ্রী সনজিৎ কর্মকার ও মো. দুলাল আকন্দ জানিয়েছেন, লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর কোনও গেট ব্যারিয়ার না থাকায় আমরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কখন যে কি হয়ে যায়। বার বার বলার পরও কোনও ব্যবস্থা নেননি রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা।

জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দিনে এবং রাতে গেটপাড় এলাকায় যানজট লেগে থাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সাল থেকে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হলেও মাঝপথে থেমে যায়। ওভারপাস নির্মাণের কাজ ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই সড়কটি বর্তমানে বেশ প্রশস্ত। তবে সড়কটি খানাখন্দে ভরা। গর্তে পড়ে অনেক সময় যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এরই মধ্যে হঠাৎ ট্রেন চলে এলে পথচারীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দৌড়াদৌড়ি করে পার হন সবাই।

জামালপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. আছাদ উজ জামান বলেন, ট্রেন চলাচলের সময় গেটপাড় এলাকায় টি-৯৪ নম্বরের গেট ব্যারিয়ার ব্যবহার করা যায় না। কারণ গেট ব্যারিয়ার ছোট আর সড়ক অনেক প্রশস্ত। ফলে ট্রেন যাওয়ার সময় ওখানের গেটম্যানদের বেশ বেগ পেতে হয়। সড়কের অর্ধেকে গেট ব্যারিয়ার ফেলে অবশিষ্ট সড়কে দুই হাত তুলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয় গেটম্যানদের। সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে নতুন করে দুই পাশে দুটি গেট ব্যারিয়ার স্থাপন করা খুবই জরুরি।

এক বছরের বেশি সময় ধরে অরক্ষিত পড়ে থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

তিনি বলেন, গেট ব্যারিয়ারের জন্য আমাদের সবসময় উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হয়। ছয় মাস আগে রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর (কার্য) কাছে আবেদন করেছি। এখনও ব্যবস্থা হয়নি।

জামালপুর রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. রেজাউল হক বলেন, রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের লক্ষ্যে গেটপাড় এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করায় আগের গেট ব্যারিয়ারটি এখন কাজে আসছে না। ওই সড়কের মাঝখান দিয়ে একটি ডিভাইডার নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। ডিভাইডার নির্মাণ হলে সড়কটি ওয়ানওয়ে হবে। তখন একপাশ দিয়ে যানবাহনগুলো যাবে অপরপাশ দিয়ে আসবে। ওই সময় দুই পাশে দুটি গেট ব্যারিয়ার দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না।

তবে এ বিষয়ে জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ওখানে গেট ব্যারিয়ার না থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমার সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

Source link

Related posts

খুলনা হাসপাতালে করোনায় আরও ৫ জনের মৃত্যু

News Desk

দেবিদ্বারে পানিবন্দি ৫ শতাধিক পরিবার

News Desk

ইটভাটার মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে সড়ক

News Desk

Leave a Comment