চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জেসমিন আকতার (২৩)। সোমবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে সকাল ৯টায় ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি টিকিট কিনেন। জেসমিন বলেন, ভোর ৪টায় স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়াই। পাঁচ ঘণ্টা পর টিকিট পেয়েছি। অনেকে রাত তিনটা কিংবা আরও আগে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল ৮টায় কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরুর এক ঘণ্টা পর আমি টিকিট হাতে পেয়েছি। তবে দীর্ঘ সময় পরে হলেও টিকিট পেযে তার চোখে-মুখে ছিল যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।
জেসমিন জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। ঈদ করার জন্য মা-বাবার সঙ্গে তিনি গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাবেন। তাই ২৯ এপ্রিলের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে আজ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ছিল শত শত মানুষের লাইন। কেউ টিকিট নিয়ে গেছেন, আবার কেউ টিকিটের জন্য স্টেশনে আসছেন।
চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে কর্মরত মনিরুজ্জমান বলেন, ‘ভোর ৫টায় ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। তখন আমার আগে ১৭ জন লাইনে ছিলেন। সকাল ৯টা ২০ মিনিটেও টিকিট হাতে পাইনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘খুবই ধীর গতিতে টিকিট দেওয়া হয়। আমার সামনে থাকা ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জনকে টিকিট দিতে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় নিয়েছে। ধীর গতিতে টিকিট দেওয়ার কারণে কাউন্টারে বেশি জটলা সৃষ্টি হয়। তার ওপর কিছুক্ষণ পর পর সার্ভারে সমস্যা হয় বলেও কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে।’
সীমা আকতার নামে এক গৃহবধূ বলেন, ভোর সাড়ে ৪টায় সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। সকাল সাড়ে ৯টায় টিকিট হাতে পাই। টিকিট পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে।
সীমা জানান, সড়ক পথে যানজটসহ নানা সমস্যার কারণে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন তিনি।
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাউন্টারে শেষ হয়ে যায় ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। লাইন শেষ হওয়ার আগে টিকিট শেষ হওয়ায় হতাশ হয়ে খালি হাতে অনেকেই ফিরে গেছেন। বেলা সাড়ে ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, সোনার বাংলাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনের টিকিট।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ঈদ উপলক্ষে ১০টি আন্তঃনগর এবং দুটি চাঁদপুরগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের সাড়ে ৬ হাজার টিকিট আছে। অর্ধেক টিকিট দেওয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে, বাকি অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। চাঁদপুরগামী দুটি স্পেশাল ট্রেনের মোট এক হাজার ২৮টি আসন আছে। এরমধ্যে চাঁদপুরগামী স্পেশাল ট্রেন-১ এ আছে ৫১৪টি এবং চাঁদপুরগামী স্পেশাল ট্রেন-২ এ আছে ৫১৪টি আসন।’
তিনি আরও বলেন, শনিবার (২৩ এপ্রিল) ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন অগ্রিম টিকিটের চাহিদা কম ছিল। এ কারণে কিছু টিকিট অবিক্রিত থেকে যায়। এগুলো এখন কাউন্টারে দেওয়া হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় দিন সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে সোমবার অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের চাপ বেশি।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ১ থেকে ৮ নম্বর কাউন্টারে পৃথক পৃথক ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ১ নম্বর কাউন্টারে নারীদের ও রেলওয়ের পাস টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২ নম্বর কাউন্টারে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (স্নিগ্ধা ও শোভন চেয়ার), ৩ নম্বর কাউন্টারে পাহাড়িকা ও উদয়ন, ৪ নম্বর কাউন্টারে মহানগর গোধূলি ও মহানগর এক্সপ্রেস, ৫ নম্বর কাউন্টারে তূর্ণা এক্সপ্রেস, ৬ নম্বর কাউন্টারে চট্টলা ও বিজয় এক্সপ্রেস (স্নিগ্ধা, শোভন চেয়ার ও শোভন), ৭ নম্বর কাউন্টারে মেঘনা এক্সপ্রেস, চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বাকি কাউন্টারে অন্যান্য ট্রেনের টিকিট মিলবে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন জানান, ‘অগ্রিম টিকিট বিক্রিকে ঘিরে স্টেশন এলাকায় যাতে কোনও সমস্যা না হয় এবং যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে টিকিট নিতে পারে এজন্য আমরা তৎপর আছি।’ টিকিট কালোবাজারি রোধে পুলিশ সতর্ক আছে বলে জানান তিনি।