কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা রঙ্গীখালি এলাকার দুর্গম পাহাড়ে ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ছয় ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার র্যাব-১৫ সদর দফতরে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– হ্নীলা রঙ্গিখালী এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল (৪০), টেকনাফ পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার নজির আহমদের ছেলে বদি আলম ওরফে বদাইয়া (৩৫), একই এলাকার বাছা মিয়ার ছেলে সৈয়দ হোসেন (৩২), পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত বনি আমিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৫), দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে কবির আহমদ (৪৩), উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৬)।
মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক জানান, টেকনাফের হ্নীলা অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে একাধিক ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। এই চক্র প্রতিনিয়ত স্থানীয় এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানিসহ হত্যা, অপহরণ ও ধর্ষণ করে আসছে। র্যাব শুরু থেকেই এ সব ডাকাত দলের গতিবিধি এবং অবস্থান নজরদারিতে রেখে গ্রেফতারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় র্যাব-১৫-এর একটি দল টেকনাফের হ্নীলা রঙ্গিখালী এলাকার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্রকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করে। সে সময় একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা র্যাবের ওপর গুলি করে দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূল হোতা ফয়সালকে র্যাব গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল চক্রের অন্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডাকাত দলের তৈরি অস্ত্রের কারখানা থেকে দুটি একনলা বড় বন্দুক, চারটি এলজি, একটি অর্ধনির্মিত এলজি, সাত রাউন্ড শটগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, একটি ড্রিল মেশিন, একটি আগুন জ্বালানো মেশিন, দুটি লেদ মেশিন, দুটি বাটাল, একটি শান দেওয়ার রেত, দুটি লোহার পাইপ, দুটি প্লাইয়ার্স, একটি কুপি বাতি এবং তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক আরও জানান, ফয়সালের নেতৃত্বে চক্রটি ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যাসহ নানাবিধ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালায়। এ ছাড়াও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সেখানে গড়ে তোলে অস্ত্র তৈরির কারখানা। ফয়সালের বিভিন্ন সময়ে তার সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা দুর্গম পাহাড়ের আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত।
জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতরা জানায়, নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি চক্রটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান থেকে অপহরণ করে ভিকটিমদের তাদের আস্তানায় বন্দি করে রাখতো এবং পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতো। টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের ওপর চালানো হতো পৈশাচিক নির্যাতন। চাহিদামতো মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজনকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে।
ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় তিনটির অধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বদি আলম ওরফে বদাইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, কবির আহমদের বিরুদ্ধে দুটি, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।