ট্রেনের ছাদে উঠতে মই ভাড়া ১০-৫০ টাকা
বাংলাদেশ

ট্রেনের ছাদে উঠতে মই ভাড়া ১০-৫০ টাকা

মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এককথায় চলতি পথে যাত্রীরা যত টাকার নোটই দিচ্ছেন তা আর ফেরত দিচ্ছেন না মইয়ের মালিক। শেষ সময়ে ঘরে ফেরার তাড়ায় এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ানোরও সুযোগ নেই। টাকা নয়; এখন বাড়ি ফেরাটাই লক্ষ্য সবার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে এভাবে বাড়ি ফিরছেন হাজারো মানুষ। রবিবার (১ মে) গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশনে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করে শ্রীপুর রেলস্টেশনে। ১৫ মিনিট পরই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এ অবস্থায় ১০-২০ ও ৫০ টাকা দিয়ে মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য যাত্রীকে। ছাদে উঠতে পেরে মনে স্বস্তি পেলেন তারা। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে ধারণক্ষমতার প্রায় চারগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

ট্রেনের ছাদে বসে থাকা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শ্রীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যাবো। ট্রেন ও বাসে জায়গা না পেয়ে একপ্রকার যুদ্ধ করে ২০ টাকা দিয়ে মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠেছি। এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেই হয়।’

মইয়ের মালিক সোহেল রানা বলেন, ‘জনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়। কারও দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে নিই না। অনেকে টাকা না দিয়েও ট্রেনের ছাদে উঠে যায়।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার দিন ধরে ঈদের ছুটি উপলক্ষে গাজীপুরের মহাসড়কে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত যানবাহনের চাপ কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। তবে গত দুদিন যাত্রীর তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা কম। রবিবার সকালে যাত্রীর চাপ বাড়লে যানবাহনের সংকট দেখা দেয়। ঢাকামুখী যানবাহনগুলো অনেকটা খালি যাচ্ছে। তবে ঢাকামুখী এবং বিপরীতমুখী যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সমান। গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতে। তবু যানবাহন সংকটে বাড়ি ফেরা মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করে শ্রীপুর রেলস্টেশনে

অপরদিকে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় ছাদে গাদাগাদি করে বসেছে ঘরমুখো মানুষ। কেউ মই বেয়ে আবার একে অন্যকে টেনে তুলতে দেখা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত থেকে নারী-পুরুষ-শিশু কেউ বাদ পড়ছে না।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রান্তিক পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভোগড়া বাইপাস কলেজ গেট, টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা, জৈনাবাজার এলাকায় দীর্ঘক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামার জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। 

এদিকে, অনেক যাত্রীকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

শেরপুরের নকলা যাওয়ার উদ্দেশে বাঘেরবাজার এলাকায় সপরিবারে অপেক্ষা করছিলেন শামসুল হক। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাস না পেয়ে পিকআপে উঠতে হয়েছে। আমার মতো অনেকে পরিবহন সংকটে পড়েছেন।

রবিবার সকালে যাত্রীর চাপ বাড়লে যানবাহনের সংকট দেখা দেয়

মাওনা চৌরাস্তার ট্রাকচালক নাজমুল হক বলেন, গত দুদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছি। বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। গাড়ির খুব সংকট।

ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য সপরিবারে ঢাকা থেকে কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছেন গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রীর প্রচুর চাপ। অনেকে ল্যাম্পপোস্ট ধরে, আবার কেউ মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠেছেন। 

ট্রেনের টিকিট বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, যেকোনও সময়ের তুলনায় যাত্রীর চাপ চার গুণ বেশি। বেশিরভাগ যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠছেন।

অনেক যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরকম কিছু চোখে পড়লেই তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গাজীপুরের মহাসড়কগুলোর কোথাও যানজট নেই। স্বাভাবিক গতিতেই চলছে যানবাহন। সড়কের সব এলাকায় একই পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে ট্রেনে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বাড়ি ফিরছেন।

Source link

Related posts

রাজশাহী ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের মৃত্যু

News Desk

বদলগাছীর তথ্যে জয়পুরহাটের সব বিদ্যালয় বন্ধ, তবে নওগাঁয় খোলা

News Desk

ঝরনার পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি

News Desk

Leave a Comment