১০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটারের পথ উদ্বোধন করবেন। শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। রেলে চড়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার কথাও রয়েছে তার। আধুনিক সড়ক যোগাযোগের পর দ্রুতগতির রেল সেবার সূবর্ণ যাত্রায় আনন্দিত পদ্মাপাড়ের মানুষ।
১ বছর ৩ মাস আগে পদ্মা সেতুর সড়ক পথ চালু হওয়ার পর রেল পথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে ১৭২ কিলোমিটার রেল পথের ৮২ কিলোমিটারের প্রথম সেশনটির উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। মাওয়া স্টেশনের পাশে সুধী সমাবেশস্থলে প্যান্ডেল তৈরিতে চলছে দেড় শতাধিক শ্রমিকের নিরলস কর্মযজ্ঞ।
সুধী সমাবেশের টেন্ট করতে আসা শ্রমিক রাজ্জাক মন্ডল বলেন, প্যান্ডেলের সেটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট প্রায় শেষের দিকে। দেশের এতো বড় একটি প্রকল্পে কাজ করতে পেরে কম খুশি নন শ্রমিক-প্রকৌশলীরাও।
মাওয়া স্টেশনের প্রকৌশলী আ. রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব কাজ মোটামুটি শেষ। এখন শুধু ফিনিশিং চলছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ হচ্ছে। খুবই আনন্দিত আমরা। দেশের বৃহত্তম একটি প্রকল্প এটি। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন একটি দিগন্ত। এটা আমাদের প্রকৌশলীদের কাছেও অনেক বড় স্বপ্নের।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবরে খুশি স্থানীয় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরবাসী খুব গর্ববোধ করছি। বাড়ির পাশে রেল সংযোগ কখনও চিন্তাই করতে পারিনি। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ জন্য আমরা শ্রীনগরবাসী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিক্রমপুরবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই। ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু পূর্ণতা পাবে রেল সংযোগ চালুর মধ্য দিয়ে। এই অঞ্চলে একটি অনন্য যোগাযোগ স্থাপন হবে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে এখানকার দলীয় নেতাকর্মীরা নতুনভাবে উজ্জীবিত এবং ঐক্যবদ্ধ হবে। বিক্রমপুরবাসী কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এবং প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য রাস্তার পাশে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করবে। শুভেচ্ছা জানাবো।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুধী সমাবেশে ১০০০ থেকে ১২০০ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রস্থতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রেল পথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলাসহ যাবতীয় বিষয়ে প্রস্তত রয়েছেন বলে জানান প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে এই রেল প্রকল্পের কাজ করছি। আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত দিন আগামী ১০ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমরা ট্রেনে করে পদ্মা সেতু হয়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গা স্টেশনে যাবো। সেখানে স্টেশন পরিদর্শন করে একটি জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। আমাদের মাওয়া স্টেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ভাঙ্গার কাজটি একটু পরে শুরু করেছি বিধায় সেখানে কিছু কাজ বাকি। ভাঙ্গা স্টেশনটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন। যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী সুন্দর একটি স্টেশন হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্টেশনগুলো দেখাবো। রেল চলাচলের জন্য টেকনিক্যালি আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের স্টেশন রেডি। লাইন রেডি করাসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক দিন পর প্রধানমন্ত্রী এতো বড় ট্রেন লাইনে যাত্রা করবেন। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সবশেষ গেলো ১৫ সেপ্টেম্বর স্পিড টেস্টে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলে ট্রেন। পরের দিন ১৬ সেপ্টেম্বর পাথর নিয়ে চলে পরীক্ষামূলক মালবাহী ট্রেন।
এই প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ আগামী বছর জুনেই শেষ করে যশোর পর্যন্ত রেল পথ চালুর কথা রয়েছে।