ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে চট্টগ্রামে, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের
বাংলাদেশ

ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে চট্টগ্রামে, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা কাবু হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর বাড়তি চাপ। এ রোগে সব বয়সীরা আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি শিশু এবং বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে, জেলার ১৫টি উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ঠান্ডাজনিত রোগের বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র মজুত রাখতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিনে শিশু ওয়ার্ডে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছে ৫৩ জন, ১৪ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছে ৫৪ জন এবং ১৩ জুন ভর্তি হয় ৩৬ জন। একইভাবে ২০২৩ সালে শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয় ৬ হাজার ৪০ জন এবং আগের বছর ২০২২ সালে রোগী ভর্তি হয় ৪ হাজার ৬৫৩ জন।

চমেক হাসপাতাল ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৬৪টি। সরেজমিন দেখা গেছে, এ ওয়ার্ডে বেডের পাশাপাশি মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছে প্রচুর শিশু রোগী। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। অতিরিক্ত শিশুকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সরা। এ ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সরা জানিয়েছেন, ওয়ার্ডে এখন দৈনিক ১২৫ থেকে ১৩০ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকে। কোনও কোনও দিন ২০০ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল বাকের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তবে ২১ জানুয়ারি থেকে আবারও তাপমাত্রা কমবে। ওই দিন থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে শীতের তীব্রতা বাড়বে।’ 

চমেক হাসপাতাল শিশু রোগ ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। তবে এখনও মাত্রা অতিক্রম করেনি। হাসপাতালের আউটডোর এবং ইনডোরে রোগীর চাপ বেড়েছে বেশি। শ্বাসতন্ত্রের রোগে শিশুরাই বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বয়স্করাও হাঁপানিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত এ রোগগুলো মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এজন্য ঠান্ডা, ধুলোবালি ও ধোঁয়াকে এড়িয়ে চলতে হবে। সব সময় গরম কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নবজাতকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্তকে খাবারের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগসহ নানান রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য আসে। এর মধ্যে এখন তিন ভাগের দুই ভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। একইভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত নানান সমস্যা নিয়ে।’

ঠান্ডাজনিত এ রোগগুলো মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী দেখা হয়। যার মধ্যে ১২০ জন থেকে ১৫০ জনই আসছে ঠান্ডাজনিত নানান রোগের লক্ষণ নিয়ে। যেসব রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে। ওয়ার্ডে এখন পুরোপুরি রোগী ভর্তি থাকছে।’

তিনি বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত নানান রোগের পাশাপাশি ইদানীং করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত। এ ছাড়া প্রতিদিন ৩-৪ জন করে করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যারা জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা নিয়ে আসছে। তবে আগে করোনা হলে রোগীরা খাবারের ঘ্রাণ পেত না বর্তমানে রোগীরা ঘ্রাণ পাচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে এখনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন জনসচেতনতা।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী বাড়ে। এসব রোগ নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। বিশেষ করে জেলার ১৫টি উপজেলায় অবস্থিত সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লের চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। চিকিৎসাসেবায় কোনওি ধরনের ত্রুটি হচ্ছে না।’

Source link

Related posts

আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ

News Desk

হাসপাতালের কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে গিয়ে ধরা খেলেন ৩ কর্মচারী

News Desk

রাজশাহীতে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ২ লাখ 

News Desk

Leave a Comment