অবশেষে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রফতানির কথা স্বীকার করেছে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষ। তারা বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রফতানি করে আসছিল।’
একই সঙ্গে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণে ৪৩ জন নিহতের ঘটনার তিন দিন পর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন মালিকপক্ষ। মঙ্গলবার (৭ জুন) বিকালে বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষের পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ দুর্ঘটনায় আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। সেই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, কনটেইনার ডিপোর মূল কাজ হলো দৈনিক ভিত্তিতে কনটেইনারের জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া এবং তা আদায় করা। এখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি অফিস আছে। তারা ডিপোর আমদানি-রফতানি কাজ সার্বাক্ষণিক তদারকি করে। তাদের অনুমতি ছাড়া কনটেইনার তো দূরের কথা এক কেজি পণ্যও ডিপোতে প্রবেশ কিংবা বের করা অসম্ভব। এমনকি যেকোনো কনটেইনারের লক-আনলক করতেও তাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ডিপোতে হাজার হাজার কনটেইনারের মধ্যে মাত্র একটি বিস্ফোরণ হওয়া রহস্যজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই আমরা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোনও মালিক কি চায় তার প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হোক। কোটি কোটি টাকা খরচ করে, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তৈরি করা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় মালিকেরই সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা থাকে। এখন একতরফাভাবে কেউ যদি এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য কেবল মালিককেই দোষারোপ করেন, নানা অজুহাত খুঁজে একটি কোম্পানিকে ধ্বংস করতে চান, তা দুঃখজনক। এটি ব্যবসায়ী সমাজের জন্য অশনি সংকেত। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আমদানি-রফতানি পণ্য। দেশের ছয়টি কোম্পানি এটি উৎপাদন করে। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য পণ্যের মতো এটিও ডিপোতে শুল্কায়ন শেষে বন্দরের মাধ্যমে রফতানি হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের ডিপোর মাধ্যমে পণ্যটি রফতানি হয়ে আসছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বলতে কোন সংস্থাকে বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। তারা পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনও সময় অনুমতি নিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে অন্য কোনও সংস্থা থেকে নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অরেঞ্জ-এ, অরেঞ্জ-বি এবং রেড; এই তিন ক্যাটাগরিতে কনটেইনার ডিপোগুলোকে আমরা লাইসেন্স দিয়ে থাকি। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কিংবা কোনও রাসায়নিক পদার্থ মজুতের জন্য রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বিএম কনটেইনার ডিপোকে রাসায়নিক পদার্থ রাখার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। রেড লাইসেন্স পেতে হলে ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। তাদের অনুমোদনপত্রের ভিত্তিতে রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকে পরিবেশ অধিদফতর।’
মুফিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমতি না থাকলেও ঘটনার পর আমরা সরেজমিনে দেখেছি, ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মজুত ছিল। এখন তারা স্বীকারও করেছেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার সময় ফরমে উল্লেখ করতে হয় কোন ধরনের দাহ্য পদার্থ আছে তার নাম লিখতে হবে। তারা ওই কলামে কিছুই উল্লেখ করেননি। এখানে আইন লঙ্ঘন করেছেন। এখানে যদি কোনও ধরনের দাহ্য পদার্থ না থাকে তাহলে আগুন ধরলো কেন, কেনই বা বিস্ফোরণ ঘটলো?।’
চট্টগ্রাম বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘রাসায়নিক রাখার বিষয়টি আমাদের জানাননি ডিপোর মালিকপক্ষ। আমাদের কাছ থেকে কোনও লাইসেন্স কিংবা অনুমোদন নেননি তারা।’
স্মার্ট গ্রুপের জিএম মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমোদন নিয়েই বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সসাইড রেখেছি। তবে এই রাসায়নিক পদার্থ কোনও বিস্ফোরক নয়। বিস্ফোরক অধিদফতর থেকে দেওয়া চিঠি আমাদের কাছে আছে। সব কাগজপত্র ঠিক আছে। তবে কি কারণে, কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় রাসায়নিক থাকা একটি কনটেইনারে বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। মৃতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী রয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।