সুনামগঞ্জে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে হু হু করে বসতঘরে পানি ঢুকছে। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঁচটি স্থান ডুবে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে সড়কে নৌকায় চলাফেরা করছে মানুষ।
সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর উপজেলার প্রায় সব বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বানভাসী মানুষ জানমাল রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংসারিক জিনিসপত্র চৌকি খাটের উপরে তুলে রেখেও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না। টিভি, ফ্রিজসহ কোটি কোটি টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এখন বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ
পুরো সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ ভাগ বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক শহরের শতভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর এলাকার প্রধান সড়ক হাঁটু পানি থেকে কোমর পানিতে ডুবে আছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে অনায়াসে নৌকা চলাচল করছে।
এদিকে ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ জেলা ও সংলগ্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ শতাংশ বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক শহরের শতভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পানি বাড়ছে। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে সুনামগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বসতবাড়ির শত শত বৈদ্যুতিক মিটার পানিতে ডুবে গেছে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাহিরপুর উপজেলার বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩৩ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বন্যাদুর্গত মানুষদের মধ্যে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপরে, সিলেট নগরীর পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।