গ্রামের সহজ-সরল ছেলেটি কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপতি। কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে করেছেন তিনতলা বাড়ি। অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে যার কষ্টে দিন পার হতো, সেই ছেলে ঢাকা থেকে কোটি টাকার গাড়িতে বাড়িতে আসেন। কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি। তার হঠাৎ এমন আমূল পরিবর্তনে গ্রামজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে জন্মায় নানা প্রশ্ন।
বলা হচ্ছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বড় বামুন্দী গ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমানের কথা। তিনি এই গ্রামের কৃষক গোলাপ রসুলের ছেলে। উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় গিয়ে যেন ‘আলাদীনের চেরাগ’ হাতে পেয়ে যান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন এই আব্দুল্লাহ আল নোমান। যেটির নাম শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (এসপিবিকে)। সেখানে সভাপতি হিসেবে কাজ করেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তিনি নিজে।
বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান উপদেষ্টা করে মিজান ও নোমান এই এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। একটি এনজিওর লাইসেন্স পেতে যেখানে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে নোমান মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলেন এই এনজিও।
এনজিও প্রতিষ্ঠার পরই মূলত আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যান নোমান। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দফতরের কাজগুলো জোর খাটিয়ে বাগিয়ে নেয় তার এনজিও। কাজের জন্য আসাদুজ্জামান খান কামাল ফোন করতেন সংশ্লিষ্ট দফতরে।
বেসরকারি শিক্ষা ব্যুরোর (বিএনএফই) প্রায় দেড় শতাধিক কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতিয়ে নেন তারা। অনেক অভিজ্ঞ ও নামী এনজিওদের বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলার কাজ নেয় নোমানের এসপিবিকে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত কোটি নিয়ে লাপাত্তা মিজান এবং নোমান।
দেখা গেছে, নোমান যেখানে ৭-৮ বছর আগে টাকার অভাবে ঢাকায় চলতে পারতেন না, সেখানে তিনি গত চার বছরের মধ্যেই গ্রামে করেছেন ট্রিপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িতে আছে জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুলের ব্যবস্থাও। গ্রামে কিনেছেন ৩০ কোটি টাকার জমি। এলাকায় শোনা যায়, গত চার বছরে গ্রামে যত জমিই বিক্রি হয়েছে সব এই নোমান কিনেছেন।
এর বাইরেও ঢাকার আমিনবাজারে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রজেক্টে আছে নোমানের প্রায় তিন কোটি টাকার জমি। সাভারের হোমটাউন গ্রিন সিটিতে আছে অর্ধকোটি টাকার জমি। এ ছাড়া ঢাকায় রয়েছে তার নিজস্ব তিনটি ফ্ল্যাট। চড়েন দামি গাড়িতে।
এই নোমান গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ইলেকশন অবজারভার কনসার্টিয়াম (ইওসি) নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। যার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বলা বাহুল্য, ছাত্রলীগ নেতা মিজান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে গুলি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে সরেজমিন আব্দুল্লাহ আল নোমানের গ্রামের বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি তার স্ত্রী হুমায়রা খানকে পাঠিয়ে জানান, তিনি (নোমান) অসুস্থ। কাল সরাসরি কথা বলবেন। এখন কোনও কথা বলতে পারবেন না।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিক যাওয়ার ঘটনায় ওই রাতেই পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন নোমান। পরবর্তী সময়ে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।