দেশের অর্থনীতিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এর মধ্যে অন্যতম মহাসড়ক লাগোয়া হোটেল ও রোস্তারাঁগুলো। কারফিউসহ দেশের অস্থিতিশীল অবস্থায় ১৭ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মহাসড়ক বন্ধ থাকায় এসব হোটেল-রোস্তারাঁ অচল হয়ে পড়ে। এই ১০ দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হোটেলগুলোর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির হয়েছে। এমনটাই দাবি করেছেন হোটেল মালিকরা। তারা জানান, এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বাড়বে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ১০৪ কিলোমিটার এলাকা। এই এলাকা ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি হওয়াতে পরিবহনের যাত্রা বিরতির উপযুক্ত স্থান। যে কারণে সময়ের সঙ্গে মহাসড়ক কেন্দ্রীক গড়ে ওঠে ছোট-বড় প্রায় ৪০০ হোটেল-রেস্তোরাঁ।
হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অঞ্চলের এসব হোটেলে অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিকিকিনি চলে। বেচা-কেনার ওপর নির্ভর করেই লাভ হিসাব করেন মালিকরা। কোনোটিতে কম কোনোটিতে বেশি বিক্রি হলেও গড়ে দিনে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয় একেকটি হোটেলে। এই বিক্রি থেকে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিশ্রমিকসহ আনুসাঙ্গিক খরচের পর হয় লাভের হিসাব।
মালিকদের কয়েক জন জানান, ১০ লাখ টাকা বিক্রি করতে একটি হাইওয়ে হোটেলকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হয়। ৪০০ হোটেলে গড়ে কাজ করেন ৫০ জন কর্মী। এরমধ্যে কোথাও আছে ২৫০ জন আবার কোথাও ১০ জন। আর সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার জন। তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। বন্ধেও তাদের অর্ধেক বেতন দিতে হয়েছে। ৫০০ টাকা করে প্রতিদিন ১০ লাখ এবং ১০ দিনে তা ১ কোটি টাকা হয়। এটা মালিকদের পকেট থেকে দিতে হয়েছে।
এছাড়া বন্ধ থাকায় প্রতিটি হোটেলে এক দিনে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। ১০ দিনে ১ কোটি টাকা। প্রতি হোটেলে ১ কোটি টাকা হলে ৪০০ হোটেলে ৪০০ কোটি টাকা বিক্রি বন্ধ ছিল।
তারা বলছেন, এভাবে চললে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কাজ হারাবেন কয়েক হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তা। অনেক হাইওয়ে হোটেলের ফটক চিরতরে বন্ধও হতে পারে।
পদুয়ার বাজার এলাকার ছন্দু হোটেলের মালিক ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে বেশিরভাগ স্থানীয় ক্রেতা। এরপরও আমরা কয়েক লাখ টাকার ধাক্কা খেয়েছি। কিন্তু যারা বাস নির্ভর তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। বিশেষ করে ১৭ তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হন। কারণ ওই সময় কোনও বাসও আসেনি। আবার কোনও ধরনের ক্রেতাও যায়নি। একেবারে বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর দরজা। এখনও বাস চলাচল একেবারে কম।’
হাইওয়ে হোটেল মালিক সমিতি কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক নাসিরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘করোনার ধাক্কা আমরা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কারফিউ। কারফিউতে পুরোপুরি বন্ধ ছিল হোটেলগুলো। অনেকে করোনার সময় ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার ব্যবসা চালু করতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তারা। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে আমাদের প্রায় তিন মাস লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হোটেলে দিনে গড়ে ১০ লাখ টাকা কেনাবেচা হয়। আর নাহলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হয় না। কারণ এখানকার বিদ্যুৎ আর গ্যাস বিল শিল্প এলাকার থেকেও বেশি। এছাড়াও আরও অনেক খরচ। গত ১০ দিনে বেচা-বিক্রি ছিল শূন্যের কোটায়। এখনও যে খুব বেশি ভালো এমন নয়। তবে এখন কোনোরকম কর্মচারীদের খরচ উঠে আসে।’
সরকারি কোনও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেশ এখনও অস্থিতিশীল। সবকিছুর সমাধান হলে সরকারের কাছে আবেদন করবো, যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। এছাড়াও আমরা অনুরোধ করবো, যাদের বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে সেগুলোর সুদ যেন কমিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ায়। না হলে অনেক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়বেন।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে সবারই কিছু সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি, ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’