নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল যেকোনও দিন ঘোষণা করা হতে পারে। এমন অবস্থায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে রংপুর-৩ (সদর) আসনে প্রার্থী হওয়ার দাবি জানিয়ে নগরীতে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাতে লাগানো পোস্টার দেখে রংপুরের রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
রংপুর জাপার তিন নেতার ছবির সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ছবি সম্বলিত পোস্টারে রংপুর-৩ (সদর) আসনে এমপি হিসেবে জনগণ তাকে দেখতে চায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুরে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি জাতীয় পার্টি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে? কারণ, রংপুরের তিন নেতার ছবি সম্বলিত পোস্টারে আজমল হোসেন লেবু জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে দলের নেতাকর্মীরা জানেন।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবুর সঙ্গে শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি পোস্টারিং করার বিষয়টি স্বীকার করেন। জাপার এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) আসনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও এই আসনে এমপি হিসেবে এলাকার জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদের নাম উল্লেখ করে আজমল হোসেন বলেন, ‘রংপুর-৩ আসনের জনগণ কখনোই তার সেবা পান না। তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। কালেভদ্রে রংপুরে আসেন। একজন এমপির বিভিন্ন কারণে স্বাক্ষর, সুপারিশসহ বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে দরকার হলেও তার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না জনগণ।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির নেতারা যা বলছেন
জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত রংপুরে এখনও একক জনপ্রিয়তা আছে বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা। এর প্রমাণ হিসেবে সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান রহমান বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। এমনকি তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রংপুর হচ্ছে জাতীয় পার্টির দুর্গ। এখানে আগামী নির্বাচনে ছয়টি আসনেই দলের প্রার্থীরা জয়ী হবে বলে মনে করি।’ একই কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। তারা দুজনেই জানান, দল এখনও নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়নি। তবে নির্বাচন করার ব্যাপারে সকল ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে।
অপরদিকে, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সকল নেতাকর্মী একতাবদ্ধ। রংপুরে বেশ কয়েকটি সভায় জিএম কাদেরের উপস্থিতিতে এ আসনের প্রার্থী হতে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও রংপুর সিটি মেয়র ও জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নিজেও তাকে রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।’ ফলে তফসিল ঘোষণার পরপরই জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে বলে মনে করেন তারা।
জিএম কাদের অংশ নিলে রওশন এরশাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হওয়া নিয়েও চলছে নানান আলোচনা। জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চান জিএম কাদের রংপুর-৩ (সদর) আসনে নির্বাচন করুক। এক্ষেত্রে বর্তমান সাংসদ সাদ এরশাদ বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেবেন না বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
তবে রওশন এরশাদ চান তার ছেলে সাদ রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করুক। জিএম কাদের লালমনিরহাট সদর আসনের বর্তমান সাংসদ, তিনি সেখান থেকে নির্বাচন করুক। তবে জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, চেয়ারম্যান রংপুর-৩ আসনে আর লালমনিরহাট সদর আসনে তার স্ত্রী শেরিফা কাদের অংশ নিক।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এ নিয়ে দলের মধ্যে রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।