তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা কেবল একটি সংখ্যা নয়। হাতে হাত রেখে দাঁড়ালে এটি ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মৃত মানুষের সারি। কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকের মূল্য বৃদ্ধি করে এই মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব। কিন্তু তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং কোম্পানিতে সরকারের বিদ্যমান শেয়ার কর বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুধুমাত্র তামাকের ওপর কর বৃদ্ধি করে ২০০৭-১০ এই তিন বছরে ইউরোপের ৪১টি দেশে ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে তামাকজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করা থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।’ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কার্যকর করারোপের দাবিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে ‘লাশের সারি আর কত দীর্ঘ হলে বাড়বে তামাকের কর’ শীর্ষক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা আজিম খান।
তামাকজনিত রোগে বছরে মারা যায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সব রকমের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী করনীতি প্রণয়ন করা জরুরি। তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি করে পণ্যের ক্রয়মূল্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পন্থা বলে বিবেচিত। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কর বৃদ্ধির এই দাবির কোনও প্রতিফলন ঘটেনি। উপর্যুপরি, প্রস্তাবিত এ বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের সামান্য মূল্য বৃদ্ধির পরেও ক্রয়মূল্য আদতে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থেকে গেছে।
বক্তারা আরও বলেন, এছাড়া বাংলাদেশে খুচরা শলাকা সিগারেট বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও প্রকার বিধিনিষেধ না থাকায় এই মূল্য বৃদ্ধি ভোক্তার ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না এবং সরকারের রাজস্ব আয় এক প্রকার অপরিবর্তিতই থাকবে। সব মূল্যস্তরের সিগারেটে অভিন্ন করভার (খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ) নির্ধারণসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের প্রচলনের দাবি এবং কর আদায়ে আধুনিকায়ন পদ্ধতি প্রচলনের দাবি এবারের বাজেটেও অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য ও ফিল্টারবিহীন বিড়ির মূল্যের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এর ফলে সরকার হারাবে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব এবং ফুলেফেঁপে উঠবে কোম্পানির লভ্যাংশ।
তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির পাশপাশি সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবি বাস্তবায়িত হলে সরকার অতিরিক্ত ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বক্তারা বলেন, তামাকজাত পণ্যের কর বৃদ্ধির পাশাপাশি এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে গাইডলাইন প্রণয়ন এবং তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের কোনও বিকল্প নেই।