তিন দিবস সামনে রেখে চাঙা গদখালীর ফুলবাজার, শতকোটি টাকা বিক্রির আশা
বাংলাদেশ

তিন দিবস সামনে রেখে চাঙা গদখালীর ফুলবাজার, শতকোটি টাকা বিক্রির আশা

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ফুলের চাহিদা, সঙ্গে বাড়ছে দামও। এতে স্বস্তি প্রকাশ করছেন ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা। ফেব্রুয়ারিতে ‘পহেলা ফাল্গুন’, ‘ভালোবাসা দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস’কে সামনে রেখে আশায় বুক বাঁধছেন ফুল চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরা। তাদের আশা, এই মৌসুমে যে ১০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা তাদের ছিল, সেটি পূরণ হবে।

প্রায় প্রতিদিন সকালেই গদখালীতে বসে নানা রঙের ফুলের মেলা। চাষিরা তাদের উৎপাদিত গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা ও গাঁদাসহ সব ধরনের ফুল নিয়ে আসেন বাজারে। অন্যান্য ফুলের চেয়ে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গোলাপ একটু বেশি দামে বিক্রি করেছেন চাষিরা। তিন-চারদিন আগেও তারা গোলাপ বিক্রি করেন প্রতি পিস ৫ থেকে সাড়ে ৬ টাকা দরে। কিন্তু এদিন তা ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা পিস দরে। 

চাষিদের দাবি, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে আগামী ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি গোলাপের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অবশ্য গত বছর দেশি লাল গোলাপ তারা ২২ থেকে ২৫ টাকা পিসও বিক্রি করেছেন।

গদখালী ইউনিয়নের কোটাপাড়া এলাকার গোলাম হোসেন এ বছর ২৫ কাঠা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন, আর এক বিঘায় গাঁদা। এবার প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা (হলুদ রঙ) দরে, আর খয়েরিরঙা গাঁদা বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকা দরে। গোলাপ বিক্রি করেছেন ১০০ পিস ৭০০ টাকা দরে।  

দাম কিছুটা বাড়লে চাহিদা এখনও কিছুটা কম বলে মনে করছেন চাষিরা। এ বছর খুব সকালে এসেও ফুল বিক্রি করতে বেশ সময় লেগেছে জানিয়ে গোলাম হোসেন বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফুল বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার বাজারে প্রচুর আমদানি থাকায় বিক্রি করতে দেরি হচ্ছে।’

এবছর আগেভাগেই ফুটেছে ফুল

পানিসারা ইউনিয়নের নারাঙ্গালি গ্রামের কিতাব আলী দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছেন। আজ ৭০০ পিস এনেছেন, বিক্রি করেছেন ৯ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে গোলাপের দাম বেশ কম পাচ্ছিলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ছে। ক্ষেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামীতে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ গোলাপের দাম মূলত সাইজ, রঙ ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে বলে তিনি জানান।

গদখালীর টাওরা গ্রামের ফুলচাষি কামাল সরকার বলেন, ‘আমার কাছে যে চায়না গোলাপ রয়েছে, তার দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা। দেখতে সুন্দর ও বেশ কয়েক দিন রাখা যায় বলেই এর দাম বেশি। ২৫ কাঠা জমিতে রয়েছে চায়না গোলাপ। আশা করছি ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ৩০ টাকার বেশি দাম পাবো এই গোলাপের।’

পানিসারার বর্ণি গ্রামের রবিউল ইসলাম ৫ বছর পর আবার ফুলের চাষ করেছেন। এক বিঘায় গোলাপ আর এক বিঘায় গাঁদা। আজ ৫০০ পিস এনেছিলেন, দাম পেয়েছেন সাড়ে সাত টাকা করে। নীলকণ্ঠ নগরের মো. সুজন দেশি সাদা গোলাপ করেছেন দেড় বিঘায়। ৫০০ পিস বিক্রি করেছেন ১০ টাকা দরে। পটুয়াপাড়ার আব্দুল হান্নান সাদা ও হলুদ চন্দ্রমল্লিকা এনেছেন ৮০০ পিস, বিক্রি করেছেন দুই টাকা পিস দরে।

আর বাজারে এদিন জারবেরা বিক্রি হয়েছে রঙভেদে প্রতি পিস ৪-৬ টাকা এবং জিপসি প্রতি আঁটি ১০ টাকা দরে।

ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদাই বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা

গদখালীর পলাশ আহমেদ নিয়ে এসেছিলেন গ্লাডিওলাস, প্রতি পিস বিক্রি করেছেন ৩-৪ টাকা দরে। তিনি আশা করছেন, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে প্রতি পিস ৮-৯ টাকা দাম পাওয়া যাবে।  

গদখালীর আড়তদার রফিকুল ইসলাম ফুলের বাজার সম্পর্কে বললেন, খুব বেশি ভালো বলা যাচ্ছে না। এবার তিন দফায় ইজতেমা, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে শবে বরাত অনুষ্ঠান থাকায় বেশ চিন্তিত রয়েছি। তবু গোলাপ ৩০ হাজার পিস আর গাঁদা ৫০ হাজার পিস বিক্রি হবে বলে মনে করছি। এখন যে দাম, তারও দ্বিগুণ পাবো বলে আশা রয়েছে।

নীলকণ্ঠ নগরের ফুলচাষি জবেদ আলীর মতে, মাঝে একটু গরম পড়ায় গোলাপ দ্রুত ফুটেছে। সে কারণে বাজারে গোলাপের জোগান বেশি। আর বেশি বেশি জোগানের কারণে দামও একটু পড়ে গেছে। গত বছর ভালোবাসা দিবসে তিনি ২৫ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছিলেন, এবার ১৫ টাকার বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।

লক্ষ্যপূরণের আশা সংশ্লিষ্টদের

জানতে চাইলে গদখালী ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, আগামী তিন দিবসকে সামনে রেখে চাষিদের প্রস্তুতি বেশ ভালো রয়েছে। মাঝে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গোলাপের দাম একটু কম থাকলেও দিন যত যাচ্ছে দাম তত বাড়ছে। প্রতিটি ক্ষেতে পর্যাপ্ত ফুল রয়েছে। আশা করছি, ফুল বিক্রির যে শতকোটি টাকার টার্গেট তা পূরণ হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ভালোবাসা দিবসে মূলত গোলাপের চাহিদা থাকে বেশি। ১ জানুয়ারি থেকে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত আমাদের যে ১০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্য, তা পূরণ হবে বলে আশা করছি।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গদখালী ও পানিসারা এলাকার প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করেন প্রায় চার হাজার চাষি। তাদের নিরাপদ জৈব বালাইনাশক ব্যবহার, শেড তৈরিসহ বিভিন্ন রকমের সাপোর্ট আমরা দিয়ে আসছি। সরকারকে জানিয়েছি, ফুলের বিকল্প ব্যবহারের নিমিত্তে কিছু প্রকল্প যাতে নেওয়া হয়। বিদেশে যেমন ফুল দিয়ে নানা প্রসাধন, সৌরভ ইত্যাদি তৈরি করা হয়; তেমন কিছু যাতে আমরা এখানেও করতে পারি।

Source link

Related posts

রাজশাহী মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু

News Desk

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জেলা আহ্বায়কসহ ৫ নেতা আটক

News Desk

বাগেরহাটে অফিস সহায়ককে কুপিয়ে হত্যা

News Desk

Leave a Comment