বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলাসহ প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। একই অবস্থা জেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চলেও। এই নদের নিম্নাঞ্চলের একাধিক চরের পানিবন্দি পরিবারে জ্বর ও পাতলা পায়খানার প্রকোপ দেখা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তবে পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাবে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৫২ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে দুধকুমার ও ধরলার পানিও।
তিস্তার পানি বেড়ে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সোমবার দুপুরের পর এসব এলাকার কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ নামারচরের বাসিন্দা ফয়জার হোসেন সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘৯নং ওয়ার্ডের নামারচরের কিছু বাড়ির আঙিনায় পানি প্রবেশ করছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে রাতের মধ্যে অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে পারে।’
এ ছাড়াও উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি এবং খিতাব খাঁ এলাকার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা তিস্তার চর। পানি বাড়ায় মাঝেরচরের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। রবিবার থেকে এসব পরিবার পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।’
অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক চরের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। নিম্নাঞ্চল ও দ্বীপচর হওয়ায় ইউনিয়নের মুসার চর এবং পূর্ব বালাডোবার চরের অন্তত ৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারে জ্বর এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মতিয়ার রহমান।
পূর্ব মশালের চরের বাসিন্দা হামিদুল বলেন, ‘আমাগো চরে অনেক ঘরে সর্দিজ্বর দেখা দিছে। আমি নিজেও ৪-৫ দিন ধরে সর্দিজ্বর ও মাথাব্যথায় কাতর। পশ্চিম মশালের চরে কয়েক ঘরে পাতলা পায়খানা রোগ ধরছে শুনছি।’
পানিবন্দি পরিবারের রোগের প্রাদুর্ভাবের খবরে সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের মেডিক্যাল টিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা মঙ্গলবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসবেন। এ ছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকবে। সেখান থেকেও স্থানীয়রা ওষুধ নিতে পারবেন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি। ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের তিস্তার মাঝের চরের কিছু পরিবারের নারী ও শিশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ব্রহ্মপুত্রের মুসারচরসহ ওই এলাকার রোগাক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’