Image default
বাংলাদেশ

তিস্তা প্রকল্পের স্পর্শকাতর বিষয় টের পেয়েছে বেইজিং

তিস্তা নদীর প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনায় যুক্ত হতে প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে চীনকে অনুরোধ করেছিল। তবে চীনের তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদ’ এবং প্রকল্পটিকে ঘিরে সংবেদনশীল ভূরাজনৈতিক ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো বেইজিং বুঝতে পেরেছে। শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ অবস্থান পরিবর্তন না করলে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে আগ্রহী চীন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের জনগণ নানা বিষয়ে চীনকে কীভাবে দেখে, তা নিয়ে সিজিএস গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৫ হাজার ২০০ নাগরিকের ওপর জরিপ চালায়। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও সিজিএসের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

চীনের রাষ্ট্রদূত ৯ অক্টোবর নীলফামারী ও লালমনিরহাটের ডালিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ও তিস্তার অববাহিকা পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত আলোর মুখ দেখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ এলাকার পরিবর্তন ঘটবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে এবং দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা অবশ্যই তিস্তার উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হতে চাই। কারণ, প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ আমাদের এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ করেছিল। আমরা বেইজিংয়ে জানিয়েছি, এই প্রকল্পের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটি এখন বেইজিংয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বিশেষ মূল্যায়নের তালিকায় আছে।’

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন তিস্তা নদী ঘিরে এই প্রকল্পের স্পর্শকাতরতা ও ভূরাজনীতি নিয়ে কোনো রাখঢাক ছাড়াই চীনের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে চীনের যে কিছুটা অনীহা আছে, সেটি আমি এখানে খোলামেলা বলছি। এই প্রকল্পের সঙ্গে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে এবং এরই মধ্যেই আমরা তা টেরও পেয়েছি।’

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ বাইরের চাপে বা অন্য কারণে শেষ মুহূর্তে প্রকল্পটি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে কি না, তা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার উদ্বেগও আছে। আমরা প্রকল্পটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কেউ এসে যদি বলে, এটি চীনের আরেকটি ঋণের ফাঁদ হবে কিংবা সুনির্দিষ্ট ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে বাংলাদেশ বলে বসে, দুঃখিত চীন, আমরা আর প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে পারছি না। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আমি বেকায়দায় পড়ব এবং এতে বিব্রত হব।’

লি জিমিং বলেন, তিনি তিস্তা প্রকল্প এলাকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, প্রকল্পটি তাঁদের প্রয়োজন। এ প্রকল্প নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার ছিল, তিস্তা সফর করে তার সবই তিনি জেনেছেন। এসব উত্তর অত্যন্ত ইতিবাচক। ওই সফরের পর তিনি প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন।

চীনের রাষ্ট্রদূতের মতে, তিস্তার মহাপরিকল্পনা নিয়ে যত উদ্বেগ থাকুক না কেন, ওই অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া উচিত।

Related posts

নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে ব্যবস্থা নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

News Desk

গাজীপুরে আবারও শ্রমিক বিক্ষোভ, ৫ পুলিশ সদস্য আহত

News Desk

নয়টি গ্রাম লকডাউন দামুড়হুদা উপজেলায়

News Desk

Leave a Comment