প্রতি বছরের শেষ সূর্যাস্ত ও নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখতে বরাবরই কুয়াকাটায় আগমন ঘটে হাজারো পর্যটকের। এ উপলক্ষে বাড়তি চাপ তৈরি হয় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায়। তবে এবার হোটেল-মোটেল ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি থাকলেও তেমন পর্যটকের দেখা নেই। ফলে হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে বছরের শেষ দিনে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। এবার সৈকতসহ হোটেল-মোটেলে নতুন বছরকে বরণের কোনও উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেও প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সবমিলিয়ে বেশি পর্যটক এবার এখানে আসেননি।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, বিনোদন স্পটসহ বিভিন্ন স্থানকে রঙিন লাইট, বেলুন দিয়ে সাজিয়ে পরিপাটি করে রেখেছে বেশিরভাগ হোটেল। তবে কাঙ্ক্ষিত বুকিং না পেয়ে হতাশ হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটের কাছাকাছি সময়ে সরকারি বন্ধ না থাকা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পর্যটকের আগমন ঘটেনি কুয়াকাটায়। প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোর ২০-৩০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বাকিগুলো ফাঁকা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির হোটেলগুলোতে কোনও প্রকার বুকিং নেই। ছাড় দিলেও পর্যটকের তেমন সাড়া মিলছে না। রবিবার পর্যন্ত হোটেলগুলোতে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার পর্যটক, যেখানে থাকার কথা ছিল লক্ষাধিক।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, ‘আমরা হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের মালিকরা কিছুটা ছাড় দিলেও পর্যটকের দেখা নেই। ২০-৩০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বাকিগুলো ফাঁকা রয়েছে। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।’
গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধের ধাক্কায় থার্টি ফার্স্টের মতো বড় দিনেও আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানালেন হোটেল কানসাই ইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। এর আগে এমন হয়নি।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘বছরের যতগুলো বন্ধের দিনে কুয়াকাটায় পর্যটকে ভরপুর থাকে তার মধ্যে অন্যতম থার্টি ফার্স্ট নাইট। এদিন ঘিরে আমাদের অনেক আয়োজন থাকে। তবে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। এজন্য বাড়তি কোনও আয়োজন করা হয়নি। আমাদের আশা ছিল, প্রচুর পর্যটক আসবেন। কিন্তু আসেননি। ২০ শতাংশ কক্ষও বুকিং হয়নি অধিকাংশ হোটেলের। পর্যটন ব্যবসার এই অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।’
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটের জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এই সময়ে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটে। কিন্তু চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে সৈকতে তেমন পর্যটক ছিল না। এ কারণে শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ ফাঁকা পড়ে ছিল। এখন থার্টি ফার্স্ট নাইটেও একই অবস্থা। মূলত এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব।’
এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে সমুদ্রসৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে উৎসব আয়োজন নিষিদ্ধ করেছে উপজেলা প্রশাসন এমনটি জানিয়েছেন কলাপাড়ার ইউএনও জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া আতশবাজি-ফটকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখন পর্যটক কিছুটা কম। তারপরও পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপর রয়েছি আমরা।’