বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ছোট ছোট মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ। পাইকাররা গরুর দাম অনেক কম বলছেন। এতে দানে পাওয়া চামড়া বিক্রি করে ভ্যানভাড়াই উঠছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনছেন না পাইকাররা। এতে করে বরিশালের প্রচুর চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভ্যানচালক রব মিয়া বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির গরুর চামড়া বিনামূল্যে সংগ্রহ করে বরিশাল নগরীর পদ্মাবতী পাইকারি চামড়ার বাজারে নিয়ে আসেন একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। সেখানে ভ্যান থামানোর পর পাইকার এসে কয়টি গরুর চামড়া আছে জানতে চান। বলা হয় আটটি বড় গরুর চামড়া রয়েছে। এ সময় আটটি চামড়ার বিপরীতে ২৫০০ টাকা দাম চাওয়া হলে পাইকার মাত্র ৫০০ টাকা দিতে চান। এতে গড়ে প্রতিটি চামড়ার দাম পড়ে ৬২ টাকার মতো।
ওই ভ্যানচালক আরও বলেন, পাইকার যে দাম বলেছে তাতে আমার ভাড়াই উঠবে না। এতে করে সারাদিন ধরে চামড়া সংগ্রহ করে আমি বা কি নেবো, আর মাদ্রাসায় কি দেবো। এখন দেখি অন্য কোথাও বিক্রি করা যায় কিনা।
এভাবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যারাই চামড়া নিয়ে এসেছেন পাইকাররা তেমন দাম বলেননি। দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়ার দাম বলা হয়েছে সর্বোচ্চ তিনশ’ টাকা। আর ছাগলের চামড়া কেনেননি পাইকাররা।
টেম্পোতে করে গরুর চামড়া নিয়ে আসা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেন, পশুর চামড়ার এখন আর দাম নেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, চামড়া কী কোনও কাজে লাগে না? তাহলে জুতাসহ যে সব জিনিস চামড়া দিয়ে বানানো হয়, তা এখন কীভাবে তৈরি হয়। তিনি প্রতি বছর মাদ্রাসার জন্য চামড়া সংগ্রহ করেন। ওই চামড়ার টাকায় ছয় মাস চলতো। গত বছরও কোরবানির পশুর চামড়ায় তেমন টাকা আসেনি। এ বছরও একই অবস্থা। এতে করে এতিম শিশুদের লালন-পালনে মারাত্মক সংকটে পড়তে হবে বলে জানান তিনি।
পাইকারি মার্কেটে অবস্থানকালে দেখা যায়, এক ব্যক্তি একটি গরুর চামড়া নিয়ে আসেন পাইকারের কাছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে চামড়া বের করার পর পাইকার জানায় চামড়া কেনা যাবে না, অবস্থা ভালো না। পরে পাইকার চামড়ার জন্য ১০০ টাকা দিতে রাজি হয। তবে ওই ব্যক্তি চামড়া না দিয়ে ব্যাগে নিয়ে চলে যায়।
নগরীর বাজার রোডের বাসিন্দা মামুন সিকদার বলেন, মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং দরিদ্র ব্যক্তিরা চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবার কেউ চামড়া ক্রয় করতে আসেনি। আগে কিছু ব্যবসায়ী ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনতো, তাদের এবার দেখা যায়নি। তিনি চামড়া মাদ্রাসায় দিয়েছেন বলে জানান।
কাউনিয়ার বাসিন্দা সোয়াইব সাকির বলেন, ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম দুই থেকে তিনশ’ টাকা। এ কারণে তারা চামড়া বিক্রি না করে এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছেন। তাদের মতো অনেকেই চামড়া দান করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এ বছর কেউ গরুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। বিক্রি করতে না পেরে তারা চামড়া দান করে দিয়েছেন। আর দান করা চামড়া সংগ্রহ করে বিপদে পড়েছেন মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের লোকজন।
বরিশাল জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, কোরবানির দান করা চামড়ার টাকা মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত এতিম শিশুদের তিন বেলা খাবার থেকে শুরু করে পোশাক এবং লেখাপড়ায় খরচ হয়। এ জন্য একটি মুদি দোকান থেকে সারা বছর চাল থেকে শুরু করে সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাকিতে আনা হতো। এরপর কোরবানির পরপরই চামড়া সংগ্রহের টাকা দিয়ে তা পরিশোধ করা হতো। কিন্তু চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার পর থেকে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বরিশালের পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, আমরা চামড়া প্রসেসিং করে এরপর ঢাকার ট্যানারিতে পাঠাই। সেখানে যাওয়ার পর ট্যানারির ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত ফুট হিসেবে আমাদের টাকা দেন না। তারা তাদের ইচ্ছামতো দাম ধরে টাকা দেন। গত বছর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ফুটে ১৫ টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যে টাকার চামড়া দেওয়া হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও দেয়নি ট্যানারি মালিকরা। তাহলে আমরা কিভাবে ফুট হিসেবে চামড়া কিনবো, প্রশ্ন রাখেন তিনি।