Image default
বাংলাদেশ

দিনাজপুরে আবারও সিজারের পর প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বজনদের দাবি, সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসাসেবায় তাদের গাফিলতি ছিল না।

শনিবার রাতে তাদের খানসামার ওই ক্লিনিক থেকে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার ভোররাতে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে প্রসূতি ও পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে উপজেলার টংগুয়া গ্রামের ধরপাড়ার আবু সায়েমের স্ত্রী মাজেদা বেগম (৩৫) প্রসবব্যথা নিয়ে পাকেরহাট লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হন। নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর রোগীর স্বজনদের আগ্রহে রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জন রবিউল ইসলাম সিজারিয়ান অপারেশন করে চলে যান। এরপর প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে প্রসূতি ও নবজাতককে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দেন। অবস্থা গুরুতর হলে প্রথমে নবজাতককে ও পরে রাত ৪টার দিকে প্রসূতিকে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসূতি ও তার কিছুক্ষণ পর নবজাতকের মৃত্যু হয়।

মাজেদা বেগমের স্বামী আবু সায়েম জানিয়েছেন, চিকিৎসক ভুলে সিজার করতে গিয়ে নাড়ি কেটে ফেলেছেন। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে দিনাজপুরে পাঠায়। সেখানে ভর্তির পরপরই প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়।

স্বজনরা জানান, যখন নবজাতক ও প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল তখন ক্লিনিকে কোনও চিকিৎসক ছিল না। কর্তব্যরত নার্স ও ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিকিৎসা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করেছেন। একটি ক্লিনিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসক থাকবে না, এটি তো হয় না। এটি রোগীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিজার অপারেশনকারী সার্জন ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রসূতির ব্যথা ছিল আগের দিন থেকে। অপারেশন আরও আগে করা উচিত ছিল। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপারেশন করি। তখন তেমন সমস্যা ছিল না। অপারেশন পরবর্তী সমস্যার কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ভালোভাবেই অপারেশন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিতে পারবে না। আমার কোনও দোষ নেই।

ক্লিনিকের ম্যানেজার আব্দুর জব্বার বলেন, সিজারের পর নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে প্রথমে তাকে এবং পরে প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রসূতি ও শিশুটি মারা যায়। এখানে আমাদের কোনও গাফিলতি ছিল না।

খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুতে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি খানসামা উপজেলার পাকেরহাটের ইনফিনিটি ক্লিনিকে গোয়ালডিহি গ্রামের ভাদুশাহপাড়ার নুরুজ্জামান ইসলাম লালুর স্ত্রী রফিকা আক্তারের (২০) সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।

পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি মারা যান। এই ঘটনার পর ওই ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়।

 

Source link

Related posts

সিলেটে আবারও ভূমিকম্প, হেলে পড়েছে দুটি ৬তলা ভবন

News Desk

দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৫ ডেঙ্গু রোগী

News Desk

‘বাড়িতে গেলেই ওরা আমাকে তুলে নিয়ে যাবে’

News Desk

Leave a Comment