রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভা ও উজানচরের একমাত্র পানি নিষ্কাশনের সরকারি খালটি দখল হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখভাল না থাকায় দিনের আলোতেই মাটি ভরাট করে গড়ে উঠছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, কাঁচাপাকা ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে গোয়ালন্দ পৌরবাসীকে সারাবছরই জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গোয়ালন্দ পৌরসভা এবং উজানচর ইউনিয়ন এলাকা জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখার জন্য সরকারিভাবে খাল খনন করা হয়। খালটি “মরাপদ্মা খাল” নামে পরিচিত। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থে খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পৌরসভার মাল্লাপট্টি এলাকায় খালটি দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করেছে দখলকারীরা।
এদিকে দখল বাণিজ্যের কারণে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সংশ্লিষ্টদের নিরব থাকার কারণে দিনে দিনে খালের ৭০ শতাংশ দখল হয়ে গেছে। বাকিটুকু অকেজো হয়ে পরে আছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, খাল সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। দখল করে গড়ে উঠেছে কাঁচা-পাকা শতশত ভবন। এদিকে খাল দখল করে ভরাট করার কারণে পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ার কারণে একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা কাদের বলেন, গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি থেকে উচানচর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বড় এই খালটি ছিল। এই খালে ছোট-বড় শতশত নৌকা চলাচল করতো। এলাকার মানুষ এখানে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্ত দিনে দিনে খালটি দখল করে অনেকে ভবন তৈরি করেছে। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অনেকে মুরগি হ্যাচারি তৈরি করেছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাসির উদ্দিন রনি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খালে বেশিরভাগ অংশ দখল করে অনেকে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। আবার অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, খালটি মরা পদ্মা থেকে শুরু করে বেড়িবাঁধের সঙ্গে মিলেছে। এখন খাল পৌরবাসীর প্রধান পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ব্যবস্থা। তবে একটি মহল ব্যক্তি স্বার্থে খালটি দখল করে মাটি ভরাট করে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তবে ইতোমধ্যে দখলকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে দখলমুক্ত করার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান বলেন, খালটি দখল হওয়ার কারণে সারাবছর একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সুতরাং দখলমুক্ত করার জন্য দখলকারীদের তালিকা চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, মরা পদ্মা খাল আমাদের একোয়ার করা আছে কিনা এবং সেটা খালের খাস জমি কিনা তা তদন্ত করার জন্য আমি রাজস্ব কর্তকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। রাজস্ব কর্মকর্তার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনে উচ্ছেদ অভিযান করা হবে। শুধু মরা পদ্মার খাল নয় রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতায় যে সমস্ত খাল দখল হয়ে গেছে, সে সব জায়গার ঘরবাড়ি, দোকান উচ্ছেদ করা হবে। একটি তালিকাও জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।