সড়কটি এলজিইডির। ভাঙছে নদী! এজন্য দুই দফতরের ঠেলাঠেলিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়ক। তাই এই বর্ষায় চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্থানীয়রা। পরপর দু’বার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করলেও সঠিকভাবে কাজ না করায় তা কাজে আসেনি। শুধু সড়কই নয় ওই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চারটি গ্রামও। গত দু’বছর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড দু’দফায় ৭২ লাখ টাকা দিয়ে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারো ভাঙা অংশ রক্ষার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ সড়ক রক্ষার টাকা যাচ্ছে জলে!
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার-ঠাকুরাকোণা সড়কের চরপাড়া-কর্ণপুর অংশের আধা কিলোমিটার সড়ক চলে যাচ্ছে কংস নদীর ভাঙনে। শুধু সড়কই নয়! কংস নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চারটি গ্রামের চার শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর। হুমকির মুখে রয়েছে আরো পাঁচটি গ্রাম। ভেঙে যাচ্ছে জেলা শহর থেকে চলাচলের একমাত্র সড়কটি। স্থানীয়রা বলছেন, এখনি ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাবে আরো চারটি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।
বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজারাঞ্চলের কর্ণুপুর, চরপাড়া, পাঁচপাই ও বাঘরুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর চলে গেছে নদী গর্ভে। হুমকির মুখে রয়েছে ঠাকুরাকোণা ফকিরের বাজার সড়কের চরপাড়া এলাকায় আধা কিলোমিটার অংশ। নদীর ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে নদীর পাড়ের স্থানীয় লোকজন।
চরপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, কয়েক বছর ধরে কংস নদের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চরপাড়া-কর্ণপুর দুই গ্রাম মিলে প্রায় পাঁচশতাধিক বাড়িঘর। মানুষজন বসতভিটা হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে সড়কটিও। সড়কটিসহ ওই দুই গ্রামে নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধ না দিলে আরো কয়েক হাজার বাড়ি ঘর হুমুকিতে রয়েছে।
কর্ণপুর গ্রামের পংকজ মজুমদার বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। স্থায়ী বাঁধের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। আমাদের জমি-জমা বাড়িঘর সব কিছু নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। সবশেষ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি সরেজমিনে এসেছিলেন। ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে দ্রুত স্থায়ী বাঁধের আশ্বাস দেন।
কর্ণপুর গ্রামের বসতবাড়ি হারানোর সাহেব উদ্দিন, আব্দুল মন্নাফ, স্বপন সরকার, সত্যেন্দ্র বর্মণ, সবুর মিয়া ও সেলিম মিয়া জানান, এরই মধ্যে বাড়িঘর সব নদী গর্ভে চলে গেছে। অন্যের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়ে আছি। নিজের বাড়িঘর সব আজ কংসে বিলীন হয়েছে। আজ পর্যন্ত কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। শুধু বাড়িঘরই নয় ফসলি জমিও চলে গেছে নদী গর্ভে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন শত শত পরিবার উদ্ভাস্তু হয়ে পরেছে।
বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু বলেন, ‘কর্ণপুর চরপাড়া, ফকিরের বাজারসহ অন্তত চারটি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের বসত ভিটা হারিয়েছে। শত শত একর জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। বর্ষার শুরুতে পানি বাড়তে শুরু করায় বাড়ছে কংস নদীর ভাঙন। চোখের সামনে বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যায়। গ্রাম রক্ষা বাঁধসহ সড়কটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল হয়নি বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
বারহাট্টা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। যেহেতু সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে, তাই এটি নদী শাসনের বিষয়। তবু আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখছি। নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘সড়কটি যেহেতু নদীতে ভেঙে যাচ্ছে এখানে আমাদের করার কিছু নেই। নদীতে বাঁধ হলে আমরা সড়কটি সংস্কার করতে পারব।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এল এম সৈকত জানান, নদীর ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড অবগত আছে। এর আগেও সড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য কাজ করা হয়েছে। এ বছরও ২০ লাখ টাকার কাজ করা হবে। দুই তিন দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। নদী ভাঙনটির স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে তিনশ কোটি টাকার কাজ জুলাইয়ের দিকে প্রস্তাবের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।