দুই মাস পেরোলেও হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, নেই গ্রেফতার
বাংলাদেশ

দুই মাস পেরোলেও হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, নেই গ্রেফতার

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধ-প্রতিহত করার নামে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক ক্যাডার আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীসহ নিহত হয়েছেন ৬ জন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন অনেকে।

এ ঘটনার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি এবং অস্ত্রধারী ক্যাডারদের কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতাদের।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে প্রকাশ্য পিস্তলসহ আধুনিক অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি সাধারণ মানুষের। তবে পুলিশ বলছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া প্রদর্শন কিংবা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাতে দেখা না গেলেও গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশাল মিছিল রংপুর নগরীর জিলা স্কুল থেকে শুরু হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় গেলে বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থক কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়। এ সময় তাদের আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। ওই দিন ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশের সহযোগিতায় তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

এ ঘটনার পর আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রংপুর। এরপর থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছিল। গত ৩ আগস্ট এবং পরের দিন ৪ আগস্ট রংপুর নগরীতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য প্রকাশ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা। তারা মাথায় হেলমেট পরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় কয়েক শতাধিক ক্যাডার বড় বড় রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, পিস্তল, রিভলবারসহ হামলায় অংশ নেয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ছিল অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগের হামলা। তাদের হামলায় আন্দোলনকারী কয়েকশ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন। বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৬ জন তরতাজা যুবক।

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেওয়া রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু বলেন, ‘আমরা কেন, সব নগরবাসী দেখেছেন কীভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, গুলিবর্ষণ করেছে। এই সব অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সে কারণে আমরা মনে করি অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়।’ তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা রংপুরবাসীর দাবি। আমরা মনে করি, তারা যেখানেই অবস্থান করুক তাদের গ্রেফতার করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।’

অপরদিকে, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া মাহফুজুন্নবী ডন বলেন, ‘রংপুরে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্য দিবালোকে আগ্নেয়াস্ত্র আর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।’ সেই সব ক্যাডারদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ডিসি (ক্রাইম) শিবলী কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অবৈধ অস্ত্রধারীদের নাম আছে। আর যাদের নাম নেই সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।’

Source link

Related posts

দৌলতদিয়ায় ৪ কিলোমিটার পণ্যবাহী ট্রাকের সারি

News Desk

‘নড়াইলে হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে’

News Desk

নানা সংকটে হুমকিতে বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী

News Desk

Leave a Comment