মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে জীপ গাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের মৃত বাছেদ সিকদারের ছেলে ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মো. ফরিদ সিকদার। তিনি এই জীপ গাড়িটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে সরকারের অনুমতি ও সহযোগিতা চান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছোট বেলা থেকেই ভিন্ন রকম চিন্তা ভাবনা ছিলো ফরিদের মাথায়। তাই স্বপ্ন ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একদিন অনেক বড় হবে। অর্থের অভাবে লেখাপড়া তেমন করা সম্ভব হয়নি। বাবা স্কুলের খরচ দিতে পারতেন না। তবুও সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। ১৪ বছর বয়সে একদিন নিজেই ঠিক করলেন তার কিছু করতে হবে।
এরপর গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবদুল হাকিম সরকার নামের একটি ব্যাটারিচালিত অটো, গ্রীল ওয়ার্কশপের দোকানে কাজ শিখতে শুরু করেন। বেশকয়েক বছর পর চিন্তা করেন বিদেশ যাবেন কিন্তু এত টাকা পাবে কোথায়? পরে নিজের জমানো টাকা ও ধারদেনা করে আজগানা এলাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে নিজেই একটি অটো গ্রীল ওয়ার্কশপের দোকান দেন।
ব্যক্তি জীবনে এক কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে ফরিদের ছোট পরিবার। প্রতিদিন যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চলে ফরিদের। হঠাৎ একদিন একটি ব্যাটারিচালিত অটো কিনেন। তারপর সেই অটোর বডি বিক্রি করে দেন। কিন্তু অটোর মেশিন, ৪টি চাকা, ব্যাটারি, প্রাইভেটকারের স্ট্রিয়ারিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে মডিফাই করে প্রায় ১ মাস প্রচেষ্টার পর ড্রাইভারসহ ৬ ছিটের একটি অত্যাধুনিক জীপ গাড়ি তৈরি করেন, যার বিদ্যুৎ খরচ খুবই কম। দুই লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি এই গাড়িটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেগে চলবে।
এ ব্যাপারে জীপ গাড়ি তৈরির উদ্ভাবক ফরিদ সিকদার এই প্রতিবেদককে জানান, আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। অনেকের জীপ গাড়িতে চড়ার শখ থাকলেও তারা টাকার অভাবে কিনতে পারে না। তারা যেন অল্প টাকায় সেই জীপ কেনার শখ পূরণ করতে পারে সেজন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটি খুবই সাশ্রয়ী। এতে ড্রাইভারসহ ছয়জন বহন করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে দেশেই এই জীপ গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করাও সম্ভব। এটি খুব সহজেই যে কেউ চালাতে পারবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার কাজ আরও সহজ, দ্রুত ও সুন্দর হবে বলেও জানান তিনি।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, ফরিদ নিজের প্রচেষ্টায় একটি জীপ গাড়ি তৈরি করেছেন। গাড়িটি দেখতে চমৎকার।