দুই হাত না থাকার পরেও জিপিএ-৫ পেলো রাব্বি
বাংলাদেশ

দুই হাত না থাকার পরেও জিপিএ-৫ পেলো রাব্বি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে রফিকুল ইসলাম রাব্বি (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী। সে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারাক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। দুই হাত না থাকার পরও পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া রাব্বিকে একনজর দেখতে ঘরে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ এলাকার লোকজন।

রাব্বি ভাটিয়ারী ইউনিয়নের দিনমজুর বজলুর রহমান এবং গৃহিণী রোজি আক্তারের ছেলে।

বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে রাব্বি সবার বড়। ছোট থেকেই রাব্বি লেখাপড়ায় অত্যন্ত ভালো ছিল। স্বাভাবিকভাবে তার জন্ম হলেও ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গুরুতর আহত হয়। এ দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুটি হাত কাটা যায়। তখন রাব্বি যেমন লেখাপড়ার প্রতি মনোবল হারায়, তেমনি আমিও মনে করেছি হয়তো বাকি জীবন রাব্বিকে পঙ্গুত্বের কাছ হার মেনে থেমে যেতে হবে। কিছুদিন পর আমি খবর পেলাম রাব্বির মতো কক্সবাজারের চকরিয়ায় রায়হান নামে একটি ছেলে আছে। সে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই হাত হারানোর পরও নাকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। খবর নিয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। সে রাব্বির সঙ্গে কথা বলে। এরপর রাব্বি আবার লেখাপড়া করার চেষ্টা করে। তার দুর্ঘটনাটি ঘটে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার মাত্র একমাস আগে।’

বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘প্রথমে রাব্বি মুখ দিয়ে লেখা শুরু করতো। মুখ দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ৪.৮৩ পায়। সপ্তম শ্রেণি থেকে পা দিয়ে লেখা শুরু করে। আর এবার পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবার আমার মেজো মেয়ে রেকেয়া আক্তারও এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। সে পেয়েছে ৩.১১। রাব্বি ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে এমনটাই প্রত্যাশা আমার।’

রফিকুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘আমার এ সফলতার জন্য আমার মা-বাবার যেমন সহযোগিতা আছে তেমনি আমার স্কুলের শিক্ষক, বন্ধু, প্রতিবেশী অনেকেরই অবদান আছে। আমি ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই। এখনও আমি টিউশনি করি। এইচএসসিতে ভালো করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবো।’

ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, ‘দুই হাত না থাকার পরও রাব্বি অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক, এই প্রত্যাশাই করি। রাব্বির মনোবল দেখে কখনও মনে হতো না সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে অত্যন্ত মেধাবী। মেধা, মনোবল ও মানুষের দোয়ার কারণে আজ সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। রাব্বিকে করুণা নয়, সহযোগিতার হাত বাড়ালে সে আগামীতে ভালো ফল করবে। তার প্রতি আমার সে বিশ্বাস আছে।’

Source link

Related posts

এবারও নিতে হবে মুভমেন্ট পাস

News Desk

হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যু, উত্তাল এলাকা

News Desk

প্রায় ৩ কোটি টাকায় হবে কুরমাঘাট-কমলপুর সীমান্তহাট

News Desk

Leave a Comment