Image default
বাংলাদেশ

দু’হাত ছাড়াই জীবন যোদ্ধা

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। কাজ করার দু’হাত নেই তার। জীবিকার প্রয়োজনে সবই করতে হয়। তারপরও থেমে নেই তার কঠিন এক জীবন যুদ্ধ। ৬৮ বছর কেটে গেছে, কিন্তু হাত পাতেননি কারও কাছে। বলছি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের হত-দরিদ্র জগন্নাথ শীলের কথা। বাল্যকাল থেকেই জগন্নাথ শীল এ বয়সেও বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়েই টানছেন সংসারের ঘানি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীরা আর তার কাছে তেমন পড়তে আসে না। ফলে অভাবের তাড়নায় এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই মানুষটি। জীবনযুদ্ধে দু’পা দিয়েই লড়ছেন সাহসী জগন্নাথ শীল। খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া, শিক্ষার্থীদের পড়ানোসহ কোনও কাজই থেমে নেই ৭০ বছরের এ বৃদ্ধার।

১৯৬৭ সালে পা দিয়ে লিখেই করেছেন এসএসসি পাশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশমাতৃকায় করেছেন স্বেচ্ছাসেবকের কাজ। এসএসসি পাস করলেও দুই হাত না থাকায় চাকরি মেলেনি কোথাও। তবুও হাল ছাড়েননি জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে। থাকেন জীর্ণশীর্ণ ভাঙা একটি ছোট্ট ঘরে। এ ঘরটিও যেন নিরাপদ নয়, ঝড়-বৃষ্টির সময় চালের ফুটা দিয়ে টপটপ করে জল পড়ে। অন্যদিকে, একসময় সিনেমা জগতে ছিল তার কদর। মলুয়া সিনেমায় সাঁতার কেটে, সুপারি গাছে উঠে অভিনয় করে বেশ আলোচনায় ছিলেন সে সময়ে। অভিনয়ও করলেও এখন প্রাইভেট পড়িয়েই কোন রকমে সংসার চালান।

এখন তার সর্বশেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা। তাকে জানাতে চান তার দুঃখ দুর্দশার কথা। তার জীবনের এই শেষ মূহুর্তে চান সবার একটু সহানুভূতি, আর সরকারের সার্বিক সহায়তা। বয়সের ভারে তার শরীর অনেকটাই নাজুক। তার মধ্যে আবার করোনার শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়ের পথটা। শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছে না আর। তাতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। জগন্নাথ শীলের দুই ছেলে এক মেয়ে। ১০ বছর আগে বড় ছেলে বিয়ে করে সংসার থেকে পৃথক হয়ে যায়। আরেক ছেলে এখনো বেকার অবস্থায়।

এরমধ্যে জগন্নাথের পৈতৃক সম্পত্তি বেদখলে চলে গেছে। উপজেলার কয়েড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও ছোলায়মান নামের দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক তার পৈতৃক ৭২ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। এজন্য তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে পরবর্তীতে আদালত তার নামে জমির ডিক্রি জারি করেন। পরে আদালত জমি বুঝিয়ে দেয়ার পর দখলদাররা পুনরায় ডিক্রি জারি বাতিলের জন্য মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী জগন্নাথ শীল বলেন, ‘জন্ম থেকে দুই হাত নেই। অভাব অনটনের মাঝে ১৯৬৭ সালে মেট্রিক পাস করি। কিন্তু মেট্রিক পরীক্ষার আগে বাবা ৬৫ টাকা ফিস দিতে পারেননি। সে সময় ঢাকা গিয়ে গীতিকার লোকমান ফকিরের সহযোগিতায় মলুয়া ছবিতে অভিনয় করি। অভিনয় করে যে টাকা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে মেট্রিক পরীক্ষা দেই। এত অভারের মাঝেও কারো কাছে হাত পাতিনি। এরপর দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের বিভিন্ন তথ্যে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উপজেলার নিকরাইল বাজারে বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। তখন টেক্সটবুক বোর্ডের লাইসেন্স পেয়েছিলাম। ভালই চলছিল ব্যবসা। পরে জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে লাইসেন্স বাতিল করে। এতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সারাদেশে সরকার বই বিতরণ শুরু করে। ২০ বছর ব্যবসার পর বই বিক্রি ছেড়ে দেই। এছাড়া বাপ-দাদার জমিও অন্যরা জবর দখল করে নেয়। পৈতৃক ভিটা রক্ষার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।’

স্থানীয়রা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী জগন্নাথ খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। কিন্তু কারোর কাছে হাত পাতেননি। তার দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। ছোট ছেলেটাও বেকার করোনার কারণে। এতে চরম কষ্টে আছেন পরিবার নিয়ে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী অসহায় জগন্নাথ শীলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।

Related posts

ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী কোচে আগুন

News Desk

যশোরে ঘুম থেকে তুলে চাচাকে কুপিয়ে জখম, আটক ৩

News Desk

বাস-আলমসাধু সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ২ জনের

News Desk

Leave a Comment