বগুড়ার তরুণ নিখিল নওশাদ ও শিক্ষক সান্ত্বনা খাতুন দম্পতি বিয়ের কাবিননামায় দেনমোহর ধরা হয়েছিল ১০১টি বই। এবার বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে স্থান পেয়েছে বিষয়টি।
গত রোববার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার সৃজনশীল বিভাগে প্রথম প্রশ্ন ছিল এটি। এ জন্য নির্ধারিত নম্বর ছিল ১০।
এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, দেনমোহর হিসেবে ১০১টি বই নেওয়ার বিষয়টি খুব আলোচিত হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ায় আগ্রহ তৈরি ও বই পড়ার গুরুত্ব বোঝাতেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ফারহানা আফরোজ প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেন।
প্রশ্নপত্রে নিখিল নওশাদ-সান্ত্বনা খাতুনকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বাংলায় একটি অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া হয়। লেখাটি হুবহু ছিল এমন, ‘গত ১৬-০৯-২০২২ তারিখ তরুণ কবি নিখিল নওশাদ বিয়ে করেন স্কুলশিক্ষক সান্ত্বনা খাতুনকে। তাঁদের বিয়ের দেনমোহর হিসেবে টাকা বা সোনাদানা নয়, ছিল ১০১টি বই। কনে সান্ত্বনা খাতুন মনে করেন, অন্য সম্পদ ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু বই পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা কখনো হারিয়ে যাবে না। কনে সান্ত্বনা খাতুন বলেন, সোনাদানা, টাকাকড়ি আমার কাছে মূল্যহীন। বই আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। ( তথ্য: দৈনিক প্রথম আলো)।’
এরপর ১০ নম্বরের চারটি সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়—
(ক) মনের দাবি রক্ষা না করলে কী বাঁচে না?
(খ) সাহিত্যচর্চাকে শিক্ষার সর্বপ্রথম অঙ্গ বলা হয় কেন?
(গ) কনে সান্ত্বনার মানসিকতায় ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) সোনাদানা, টাকাপয়সা নয়, বই হলো অমূল্য সম্পদ—মন্তব্যটি ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো?
নিখিল নওশাদ বলেন, ‘বিষয়টি সত্যিই আমাদের জন্য খুব আনন্দ ও গর্বের। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের নিখিল নওশাদ তরুণ কবি। তিনি ‘বিরোধ’ নামের একটি ছোটকাগজের সম্পাদক। সান্ত্বনা খাতুন বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক। তাঁর বাবার বাড়ি সোনাতলা উপজেলার কামালেরপাড়া গ্রামে।
দুজনই পড়াশোনা করেছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে। কবিতার সূত্রে পরিচয় নিখিল-সান্ত্বনার। এরপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। একপর্যায়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুজন। সান্ত্বনা শর্ত দেন, দেনমোহর হিসেবে ১০১টি প্রিয় বই দিতে হবে। প্রিয় বইয়ের তালিকাও দেন নিখিলের হাতে। তবে ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন দোকান ঘুরে সব বই সংগ্রহ করতে পারেননি নিখিল।
কাবিননামায় দেনমোহর হেসেবে ১০১টি বই লিখতে চাইলে প্রথমে স্থানীয় এক কাজি রাজি হননি। পরে বই বাবদ ২ লাখ ২ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে ১৬ সেপ্টেম্বর নিখিল-সান্ত্বনার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিষয়ে প্রথম আলোর প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।