কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পাঁচ মাসের সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পারিবারিক কলহের জেরে দেবরের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন জাকির হোসেন জফিয়াল (২৮) ও চাঁন মিয়া (৪৩)। জাকির হোসেন উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের ওকড়াকান্দা গ্রামের গোলাম শহিদের ছেলে এবং নিহত হাফছা আক্তার হারেনার উকিল বাবা (বিয়ের অভিভাবক)। চাঁন মিয়া হাফছার দেবর ও নিহত শিশু হাবিবের চাচা।
বুধবার (২৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রৌমারী উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জামালপুর র্যাব-১৪-এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান। পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায় র্যাব।
এর আগে শনিবার উপজেলার সদর ইউপির নতুন বন্দর গ্রামে পাঁচ মাসের শিশুসন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন মা হাফছা আক্তার হারেনা (২৭) ও শিশুসন্তান হাবিব। হাফছার বাড়ি রৌমারী সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রশীদের মেয়ে। তার স্বামীর বাড়ি উপজেলার শৌলমারী ইউপির ওকড়াকান্দা গ্রামে। স্বামীর নাম শাহের আলী। এ ঘটনায় হাফছার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে রৌমারী থানায় মামলা করেন।
আরও পড়ুন: ৫ মাসের সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব জানায়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে সন্দেহভাজন হিসেবে জাকির হোসেনকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত নিহতের দেবর চাঁন মিয়াকে রৌমারীর বোয়ালমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের দাবি, আসামিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হাফছার দেবর চাঁন মিয়া।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব জানায়, গত শুক্রবার কুড়িগ্রামে সন্তানকে ডাক্তার দেখিয়ে বিকালে রৌমারী ফিরে যান হাফছা। ওই সময় তার সঙ্গে জাকির ছিলেন। এরপর হাফছা রৌমারী বাজারে সন্তানের জন্য ওষুধ কিনে ওকড়াকান্দা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ির দিকে রওনা হন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাকির ও চাঁন মিয়া নতুন বন্দর এলাকায় নির্জন স্থানে জনৈক সবুর মিয়ার পুকুর পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন। ওই পুকুর পাড়ে পৌঁছালে সন্তানসহ হাফছাকে গলা কেটে হত্যা করেন তারা।
কেন ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ড?
হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহের কথা বলা হলেও কি নিয়ে কলহ তা পরিষ্কার করে জানাতে পারেনি র্যাব। র্যাব বলছে, প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেলেও বিস্তারিত জানতে আরও তদন্ত ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মা ও সন্তানকে গলা কেটে হত্যা, সেই জাকির কোথায়?
আশিক উজ্জামান বলেন, ‘হাফছার সন্তান অসুস্থ থাকায় স্বামীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আগে থেকেই বিবাদ ছিল। অসুস্থ সন্তানকে প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসতে চাইতেন। সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাফছার স্বামী টাকা খরচ করতেন বলে দেবর চাঁন মিয়া পছন্দ করতেন না। ভাতিজা অসুস্থ হওয়ায় এবং তার পেছনে সংসারের টাকা চলে যাওয়ায় ঝামেলা মনে করতেন। এরই মধ্যে জাকিরের সঙ্গে হাফছার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। এ সুযোগে হাফছার দিকে অনৈতিক দৃষ্টি দেয় জাকির। এতে পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্ভবত জাকিরের কিছু চাওয়া ছিল। তা প্রত্যাখ্যান করায় হাফছার ওপর ক্ষুব্ধ হন জাকির। বিষয়টি বুঝতে পেরে জাকিরকে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন চাঁন মিয়া। আসামিদের রৌমারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’