যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশি-বিদেশি যতই ষড়যন্ত্র হোক, কোনোটাই সফল হবে না। কারণ দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে এবং তার সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে।’
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে জি-২০ সামিট হয়ে গেলো। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুধুমাত্র দেশের মানুষের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য। সেখানে বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন।’
শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকালে যশোর টাউন হল মাঠের রওশন আলী মঞ্চে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, নারী ও শিশুদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সরকারের গৃহীত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলার উপকারভোগী জনসাধারণের’ পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ফিলিস্তিনি সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যার প্রতিবাদে আজ আমাদের দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সেই সাহস দেখাতে পারেনি। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমরা শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে এমপি কাজী নাবিল বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা উন্নয়নের কারণে সারাবিশ্বে আমরা এখন রোল মডেল। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের গল্প শুনতে চান।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের জিডিপি ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ মিলিয়ন ডলারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে অনেক। এগুলো সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে। শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা সবসময় ভাবেন এবং তাদের জন্য কাজ করেন। সে কারণে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন, তাদের ভাতা বাড়িয়েছেন। বিধবা, বয়স্ক, শিক্ষা উপবৃত্তি এমন দেড় শতাধিক ভাতা চালু করেছেন, যাতে দেশের মানুষ একটু ভালো থাকতে পারে।’
এমপি কাজী নাবিল আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সেই পিতার সন্তান যিনি উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, “দেশ দুই ভাগে বিভক্ত। একটা অংশে শোষক, আরেক অংশে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” বঙ্গবন্ধুর এই কথাকে হৃদয়ে ধারণ করে শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা চায় না, দেশের হতদরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাক। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আবারও সেটি চালু করেন। যা এখন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। প্রধানমন্ত্রীর এসব সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে আমাদের।’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে এমপি কাজী নাবিল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের ভেতরে তারা ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে না। জনগণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের নারকীয় কর্মকাণ্ড ভোলেনি, ভোলা যায় না। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি, সার চাইতে গিয়ে ১৮ কৃষকের মৃত্যুর কথা দেশবাসী ভুলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে তারা প্রায় তিন হাজার সরকারি অফিসে আগুন দিয়েছিল। চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ঘুমন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলেছিল, গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল। তাদের সেসব নাশকতা দেশবাসী কখনও ভুলবে না।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এমপি কাজী নাবিল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে হবে। নৌকায় ভোট চাইতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা সচল থাকবে, দেশ শান্ত থাকবে।’
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, পৌর মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিস্তিনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরাসরি সুবিধাভোগী তেমন শিশুসহ ১১ নারী-পুরুষ সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।