দেশের মাটিতে বিদেশি ফল, প্রথমবারেই সফল
বাংলাদেশ

দেশের মাটিতে বিদেশি ফল, প্রথমবারেই সফল

বাড়ির আঙিনায় বাঁশের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ফল। এ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর গ্রামের যুবক সবুজ মিয়া। প্রথমবার আঙুর চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। বিদেশি এই ফল দেশের মাটিতেও যে মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়, তা করে দেখালেন তিনি।

চাষের সূচনা ও সফলতা

সবুজ মিয়া ইউটিউব দেখে আঙুর চাষের ধারণা নেন। এরপর ঝিনাইদহের মহেশপুরের যোগীহুদা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের কাছ থেকে সুপার সনিকা জাতের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন। প্রায় ১০ মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে তিন শতক জায়গায় ২৫টি গাছ লাগান। এর মধ্যে ২১টিতে ফলন এসেছে। প্রতিটির থোকায় ৩০০-৪০০ গ্রাম ফল এসেছে। প্রথমবারেই ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের কৃষকরা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

স্বাদ ও জনপ্রিয়তা

প্রতিদিন বাগান দেখার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে চাষি ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পাশের টেংরা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে ফেসবুকে সবুজের বাগানের ছবি দেখে দেখতে এসেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের মাটিতে এত সুন্দর বিদেশি ফল। খেয়ে দেখেছি, এটি অনেক মিষ্টি।’

বাগান দেখতে আসা শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক আকন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আঙুর চাষে সফল হয়েছেন সবুজ। তার এই সফলতা দেখে গ্রামের অন্যান্য যুবক ও চাষি অনুপ্রেরণা পাবেন। তারাও চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবেন।’

মিশ্র ফলের বাগান

সাতখামাইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা বাগান। সুতা দিয়ে মাচা তৈরি। সবুজ নিজেই বাগানের সব কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। বাগানে ঢুকতেই মাচায় আঙুর ঝুলতে দেখা যায়। পাশাপাশি মিশ্র ফলের বাগান। সেখানে কমলা, কুল, পেয়ারা, পেঁপে, চায়না কমলা, কলা, করমচা ও আম চাষ করেছেন।

প্রথমবার আঙুর চাষ করে চমক দেখিয়েছেন সবুজ

বাগানের কাজে সহযোগিতা করা স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ থেকে অনেক মানুষ ফলের কিংবা আঙুর বাগানে কাজ করতে বিদেশে যান। আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি যে, আঙুরের বাগানে কাজ করবো। এত ফলন দেখে অবাক হয়েছি। এখানের আঙুর খেতে খুবই মিষ্টি।’

১০ মাসে ফলন

যোগীহুদা গ্রামের এক কৃষকের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেছি উল্লেখ করে সবুজ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোপণের সাত মাসের মাথায় ফলন পাওয়ার কথা থাকলেও এসেছে ১০ মাসে। পরিচর্যায় ঘাটতির কারণে ফলন আসতে তিন মাস দেরি হয়েছে। তবু বেশি ফলন পাওয়ায় খুশি। আমার মতো আরও উদ্যোক্তা আঙুর চাষে এগিয়ে এলে বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে না। বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা যাবে। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ সম্ভব। আমার বাগানের ফল আমদানিকৃত আঙুরের তুলনায় বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু হবে। সখের বসে চাষ করলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিকল্পনা আছে।’

চাষের ধারণা

চাষ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সবুজ মিয়া বলেন, ‘চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে আঙুরের চারা রোপণ করলে প্রথম বছরেই ফল পাওয়া যাবে। যদি দেরিতে লাগানো হয়, তাহেল ফল কম আসবে। একেবারেই সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। জমিতে সাত-আট ফুট উচ্চতার খুঁটি লাগবে। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, এক লাইন থেকে আরেক লাইনের ৯ ফুট দূরত্ব এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ছয় ফুট। এভাবে রোপণ করলে বেশি ফলন পাওয়া যাবে। চারা লাগানোর স্থানে আগেই জৈব সার, টিএসপি ও জিপ সার দিতে হবে। চারা লাগানোর পর ১০-১২ দিন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। একবার ফল আসা শুরু করলে নিয়মিত পরিচর্যায় অনেকদিন ধরে ফলন পাওয়া যায়।’

সবুজ মিয়া ইউটিউব দেখে আঙুর চাষের ধারণা নেন

কৃষি বিভাগের সহযোগিতা

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদি সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আঙুর উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল। দেশে চাষ হয় না বললেই চলে। শ্রীপুরের মাটি চাষের জন্য উপযোগী মনে হচ্ছে। সাতখামাইর গ্রামের বাসিন্দা সবুজ মিয়া পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। আমরা তাকে সার, ওষুধ এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। যদি এই আঙুরের মান ভালো হয়, তাহলে উপজেলার কৃষকদের নিয়ে চাষ সম্প্রাসারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো। অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেবো।’

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঙুর চাষ শ্রীপুরের কৃষকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সবুজের উদ্যোগ ও সফলতা কৃষকদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। দেশের কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও পরামর্শ পেলে দেশে আঙুর চাষে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

Source link

Related posts

নোয়াখালীতে মিধিলি’র আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

News Desk

পর্যটকের অপেক্ষায় সুবলং ঝরনা

News Desk

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা ১ এপ্রিল, ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন শুরু

News Desk

Leave a Comment