বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বর্তমানে দেশে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ চলছে। স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ। এরপরও পণ্য পাচ্ছে না অনেকেই।’
তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে প্রশ্ন জাগে সরকারই তো অন্যায্য; সে আবার কীভাবে ন্যায্যমূল্যে পণ্য খাওয়াবে। ন্যায্যমূল্য তো সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। সচিবালয় ও প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখে, আবার এটা টিভিতে প্রচার করে দেশের কত শতাংশ মানুষকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিতে পেরেছে সরকার। দশমিক ৫ শতাংশও না। তার মানে ৯৯.০৫ শতাংশ মানুষ ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাচ্ছে না।’
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) ঢাকার ধামরাইয়ের শরিফবাগ শরিফুন নেছা মহিলা মাদ্রাসা মাঠে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘করোনার কারণে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। কল-কারখানার উৎপাদন কমেছে। তারা আগের মতো লোক রাখতে পারছে না, ছাঁটাই করছে। দেশে কাজের অভাব। দিনমজুররা কাজ পায় না। এর মধ্যে সবকিছুর দাম বেড়েছে। অথচ তারা গর্ব করে বলে, আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। আগে স্বল্প আয়ের দেশ ছিল। ১০ বছরে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। কিন্তু দেশের বাজারমূল্য বিবেচনা করলে দেখা যাবে, উচ্চ আয়ের দেশের চেয়ে দাম বেশি। তাহলে এটা কোন ধরনের মধ্যম আয়।’
তিনি বলেন, ‘টিভি-পত্রিকায় দেখানো হয় দুই হাজার ডলারের বেশি মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কিন্তু একটা কথা বলা হয় না, জনগণের মাথাপিছু কত টাকা ঋণের বোঝা আছে। যদি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার কথা হিসাব করি তাহলে চাল কেনার টাকা থাকার কথা না। এই ঋণের টাকা এত হলো কেন? উন্নয়নের চাপাবাজি শুনি। সাংবাদিক ভাইদের বলবো, উন্নয়নের পেছনে যেসব দুর্নীতি চলছে, সেসব জনগণকে বলেন না কেন? যদি দুর্নীতি না থাকে তাহলে এত টাকা পাচার হলো কীভাবে?’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনগণের আস্থার ওপর ভরসা রেখে বলেছেন আগামী দিনে বাংলাদেশের ফয়সালা হবে রাজপথে। আন্দোলন মানেই রাজপথ। আন্দোলন মানে ঘরে বসে থাকা না। ঘরে বসে আন্দোলন হয় না। ঘরে বসে সুখেও থাকা যায় না। ঘরে থাকলেও মরতে হয়, বাইরে গেলেও মরতে হয়। ঘরের বাইরে গেলে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা থাকে না। নিরাপদে ঘরে থাকতে গিয়ে সকালে লাশ পাওয়া যায়।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কথায় কথায় যিনি মানুষ মারতে অভ্যস্ত, গুম করতে অভ্যস্ত। যিনি অন্যের সমালোচনা শুনতে অভ্যস্ত না। তাকে আর যাই বলা হোক, গণতান্ত্রিক সমাজের মানুষ বলা যায় না। গণতন্ত্র মানেই তো বহু মত, বহু পথ। গণতন্ত্র মানেই তো সমালোচনা থাকবে। অন্যের মতামতের সঙ্গে আমি একমত না হতে পারি। কিন্তু অন্যের মত প্রকাশকে আমি সম্মান করবো। সবার মতের সঙ্গে একমত হবে, এমন বিধান নেই। নানা মানুষ নানা মত; কিন্তু দেশ বাঁচাতে একমত।’