কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নদে ডুবে প্রাণ হারানো দুই শিশুর মরদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এসের পাশে বিএসএফ-বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ওই দুই শিশুর নাম- পারভীন খাতুন (৮) ও সাকেবুর হাসান (৪)। তারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সরকারটারী গ্রামের রইচ উদ্দিন ও সামিনা বেগম দম্পতির সন্তান।
বিজিবির লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ফরিদ উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এস থেকে ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফ-বিজিবি বৈঠক শেষে শিশু দুটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বিএসএফের পক্ষে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেউটি-১, সেউটি-২ ক্যাম্পের বিএসএফ, সাহেবগঞ্জ থানা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজিবির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ছাড়াও অনন্তপুর ক্যাম্প ইনচার্জ আরফিন, পুলিশের পক্ষে এএসপি সুমন রেজা, ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমান, ওসি (তদন্ত) সারওয়ার পারভেজ, নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়ন ওয়ার্ড সদস্য আজিজুল ও মেছের আলী।
রইচ উদ্দিনের মামা সাইফুর জানান, সন্তানদের মরদেহ ফেরত চেয়ে লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বরাবর আবেদন করেন রইচ উদ্দিন। রাতেই শিশু দুটির লাশ দাফন করা হবে।
গত ১ জুলাই (শুক্রবার) মধ্যরাতে সীমান্ত পথে বাবা মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিএসএফের ধাওয়ায় সীমান্তের নীলকমল নদে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। দুই দিন পর রবিবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪৩ এর মাত্র ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে নদ থেকে শিশু দুটির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে বিএসএফও ভারতীয় পুলিশ।
সামিনা ও রইচ ১৬ বছর ধরে ভারতের ইটভাটায় কাজ করে আসছেন। শিশু পারভীন ও সাকেবুরের জন্ম ভারতে। ঘটনার পরদিন শিশুদের বাবা দাবি করেন, শুক্রবার গভীর রাতে দালাল জায়দুল ও গেদার মাধ্যমে ভারতের হরিয়ানা রাজস্থান সীমান্তের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ভাটায় কাজ শেষে কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তপথে বাড়িতে ফিরছিলেন। স্ত্রী সামিনা বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে নীলকমল নদের তীর দিয়ে সীমান্ত পার হচ্ছিলেন। এ সময় টহলে থাকা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ টের পেয়ে বাঁশি বাজালে ধরা পড়ার ভয়ে সবাই নদে নেমে পড়েন। নদের স্রোতে নিখোঁজ হয় তাদের দুই সন্তান। সন্তানরা বাঁচানোর জন্য মা মা বলে চিৎকার করলেও অন্ধকারে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও দাবি করেন, ভারতের সেউটি ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর আমাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তড়িঘড়ি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। আমি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝপথে যাই। এ সময় আমার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামে। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে রাতের অন্ধকারে স্ত্রীর হাত থেকে আমার সন্তানরা নিখোঁজ হয়। পানিতে ডুবে অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করেছি। তাদের সন্ধান পাইনি। কষ্ট করে আমার স্ত্রীকে পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। বাচ্চা দুইটা বেঁচে আছে, না মারা গেছে কোনও হদিস পাইনি।