ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় মঙ্গলবার (১০ মে) কমে এসেছে। তবে আজও নদী পারের অপেক্ষায় মহাসড়কে আটকে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক যানবাহন।
সরেজমিন দুপুর ২টার দিকে ঘাট এলাকা ঘুরে এ অবস্থা দেখা যায়। ঘাটের জিরো পয়েন্ট ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের সারি রয়েছে। আটকে থাকা যানবাহনের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ কমেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। যেসব যাত্রী ভেঙে ভেঙে অটোরিকশা ও বিভিন্ন যানবাহন যোগে ঘাটে আসছেন তাদের বৃষ্টিতে ভিজে ফেরি ও লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। ছোটগাড়ি ও মাইক্রোবাস ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারছে না। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ফেরি চলাচল ব্যহত ও লোড-আনলোডে দ্বিগুণ সময় লাগছে। ফেরিঘাটও কাঁদা মাটিতে পিচ্ছিল হওয়ায় যানবাহনগুলো ধীর গতিতে চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট সূত্র জানায়, গত ৫ মে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল ৯ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত পাঁচ দিনে মোট ১২০ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া থেকে ফেরিগুলো ১৩৫৬ টি ট্রিপে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া গেছে। যার মধ্যে যাত্রীবাস ছিল ৪০৩৪টি, ট্রাক ৩৭৭৩টি, ব্যক্তিগত যানবাহন মাইক্রোবাস ২২০২৯টি ও মোটরসাইকেল ৮৫২১টি। সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৩৫৭ টি যানবাহন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছায়। এছাড়া ফেরিতে যাত্রীবাহী পরিবহন অনুযায়ী এক লাখ ৪৪ হাজার ৫০৬ যাত্রী নদী পার হয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই পরিমাণ প্রায় কয়েকগুণ।
যশোর থেকে ডাব বোঝাই করে গাজীপুর যাচ্ছেন ট্রাকচালক হাবিবুর। দুপুরে দৌলতদিয়া পাম্পের সামনে ঘাট এলাকায় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আজ ঘাটে যানবাহন ও যাত্রী কম। আমি ফেরির জন্য তিন ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি। আশা করছি আর দুই ঘণ্টার মধ্যে নদী পার হতে পারবো।
তবে ট্রাকচালকদের অভিযোগ, পণ্যবাহী গাড়ির চাপ থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী দালালদের তৎপরতা বেড়েছে। ঘাট এলাকা পারাপারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গে আরও দ্বিগুণ অর্থ দিয়ে দালালের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হচ্ছে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের। বিশেষ করে তরমুজসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি ও কাঁচা পচনশীল পণ্যের গাড়ি থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজু (প্রশাসন ও অর্থ) বলেন, ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা তৎপর রয়েছেন। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ফেরি ও লঞ্চ সচল রেখে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করে যাচ্ছে।
পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া অতিরিক্ত নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এর আগেও অনেক দালালকে ঘাট থেকে আটক করেছি। অনেক সময় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে কোনও চালক আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে ঘাটে আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন আছে। সব চালকদের কাছে অনুরোধ করছি, যদি কেউ ফেরি ভাড়ার নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি দাবি করে বা নিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের পুলিশ বক্স অথবা আমাদের ফোনে জানালে পদক্ষেপ নেওয়অ হবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঘাট এলাকায় রাজধানীমুখী যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। আশা করছি বুধবা (১১ মে) ঘাট স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ২০টি ফেরি চলছে বলে জানান তিনি।